খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প অফিস শুরু হয়েছিল খালিশপুরের একটি বাড়িতে ১৯৮৭ সালে। সেখান থেকে আহসান আহমেদ রোড। এরপর গল্লামারী এলাকায় বাংলাদেশ বেতারের পরিত্যক্ত জায়গায়। সে সময় বাংলাদেশ বেতারের একতলা ভবনটি দ্বিতল করা হয়। এখানেই শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম।
স্মৃতি হাতড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আতিয়ার রহমান বলেন, সেদিনের কথা ভাবাই যায় না। এখানে সন্ধ্যার পর লোক চলাচল ছিল না বললেই চলে। অন্ধকার নামলেই শিয়ালের আনাগোনা বাড়ত, ভয় লাগত। ক্যাম্পাসে প্রায়ই ধরা পড়ত বিষধর সাপ। এমনকি প্রকল্প পরিচালক ও পরে উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়া অধ্যাপক ড. গোলাম রহমানের অফিসেও সাপ ধরা পড়েছিল। কর্মকর্তারা বিকেল হলেই শহরে যাওয়ার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে পড়তেন।
উৎসবমুখর ক্যাম্পাস
খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের গল্লামারী থেকে কিছুটা এগিয়ে গেলেই সড়কের সঙ্গে লাগোয়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক। ফটকের দুই পাশে উড়ছে লাল, নীল, সাদাসহ বিভিন্ন রঙের পতাকা। ফটকের ওপরে বড় ব্যানার টানানো। তাতে লেখা ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২১ ’।
২৫ নভেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। তাই আগের দিন, অর্থাৎ ২৪ নভেম্বর ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, সর্বত্রই চলছে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের প্রস্তুতি।
মূল ফটক দিয়ে ঢুকে পিচঢালা পথ ধরে কিছুটা এগিয়ে গেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া। এক পাশে চোখে পড়ে জটলা। চার মাসের এক শিশুকে নিয়ে রীতিমতো হইহুল্লোড় চলছে। কোলে নেওয়ার জন্য চলছে কাড়াকাড়ি। কেউ শিশুটির ছবি তুলছেন, কেউবা তার সঙ্গে সেলফি তুলছেন। ছবি তোলা পর্ব শেষে আমাদের কথা বলার সুযোগ হলো।
জানা গেল, তাঁরা সবাই মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। সেদিনই ছিল তাঁদের স্নাতকের শেষ ক্লাস। এ কারণে সবাই বেশ সেজেগুজে এসেছেন। করোনাকালেই এ ক্লাসের এক শিক্ষার্থী মা হয়েছেন। ক্যাম্পাস খোলার পর এই প্রথম সন্তানকে নিয়ে হাজির হয়েছেন তিনি। তাই শিশুটিকে ঘিরে বন্ধুবান্ধবদের আগ্রহের শেষ নেই।
শাকিলা জামান নামের শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলো। তিনি বললেন, ‘আজই ছিল স্নাতক শেষ বর্ষের শেষ ক্লাস। আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে পরীক্ষা। হয়তো আর ক্যাম্পাসে আসা হবে না। তাই সবার সঙ্গে ছবি তুলে স্মৃতি ধরে রাখার চেষ্টা চলছে।’
প্রথম দোকান মো. সাইদুল শেখের। লাল চা, ঝাল চা, ধনেপাতার চা, লেবু চা পাওয়া যায় তাঁর দোকানে। ঝাল চায়ের অর্ডার দেওয়া হলো সাইদুলকে। ধনেপাতা আর বেশ বড় একটি কাঁচা মরিচ দেওয়া চা এল হাতে। স্বাদ মন্দ নয়। চায়ে চুমুক দিতে দিতেই কথা হলো তেহসিন আশরাফের সঙ্গে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। প্রত্যয় বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ডিসিপ্লিনের, সব সেমিস্টারের ক্লাস ও পরীক্ষা একই সঙ্গে শুরু হয়, আবার একই সঙ্গে শেষ হয়। কিছুদিন আগে সব ডিসিপ্লিনের ক্লাস শেষ হয়ে গেছে। আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে পরীক্ষা। এখন চলছে পরীক্ষা প্রস্তুতির ছুটি। এ কারণে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। ক্যাম্পাসের মূল আড্ডাস্থলই হলো এই দোকানগুলো। অন্য সময় দোকানগুলোতে বসার জায়গা পাওয়া যায় না।’
ফেরার আনন্দ
সাইদুল শেখের দোকানে বসে চা খেতে খেতে দেখা যায় অদম্য বাংলার ঠিক পেছনে বাগানের মধ্যে কয়েক ছেলেমেয়ে কী যেন করছেন। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সবাই ছবি আঁকায় ব্যস্ত। সামনের প্রকৃতির দৃশ্য কাগজে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। সবাই চারুকলা অনুষদের প্রিন্ট মেকিং ডিসিপ্লিনের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পরীক্ষার অংশ হিসেবে ছবি আঁকছিলেন তাঁরা।
অন্তর মণ্ডল পেনসিল দিয়ে সামনে থাকা বাঁশঝাড়ের ছবি আঁকছিলেন। তিনি বললেন, শিক্ষকেরা জায়গা চিহ্নিত করে দিয়েছেন। এখানে বসেই সামনের কোনো একটি দৃশ্য আঁকতে হবে। মোহসানা আহসান নামের এক ছাত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে ভর্তি হওয়ার আড়াই মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে ক্যাম্পাসের যে “ঘ্রাণ”, তা পাওয়া হয়নি। বাসায় বসে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা হয়েছে বটে, তবে তাতে শান্তি ছিল না। অনেক হতাশার মধ্য দিয়ে সময় কেটেছে। এখন বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’