আপেল সিডার ভিনেগার এর ৬টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

আপেল সিডার ভিনেগার হলো আপেল থেকে গাঁজন প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়া এসিটিক এসিডের (Acetic acid) জলীয় দ্রবণ। এর মধ্যে ৯৪ শতাংশ পানি, মাত্র ৫ শতাংশ এসিটিক এসিড এবং খুবই সামান্য পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি থাকে। প্রতি ১ টেবিল চামচ পরিমাণ (১৫ মিলি) আপেলের ভিনেগার থেকে মাত্র ৩ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।
আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার উপকারিতা
কখনো হেঁচকিতে আক্রান্ত হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। হেঁচকি খুব বিরক্তিকর এবং অস্বস্তিকর একটি অবস্থার সৃষ্টি করে। আপেলের ভিনেগার অস্বস্তিকর এই পরিস্থিতি থেকে খুব সহজেই আপনাকে মুক্তি দিতে পারে। এছাড়াও প্রতিদিনের ডায়েটে আপেলের ভিনেগার রাখলে তা শরীরের জন্য নানাবিধ উপকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমনঃ
১। এসিডিটি সমস্যা ও বুক জ্বালাপোড়া দূর করে
এসিডিটি আমাদের জীবনে একটি নিত্য দিনের সমস্যা। কম বেশি সবাই আমরা এই সমস্যার সম্মুখীন হই। ভিনেগারে রয়েছে রোগ প্রতিরোধকারী বিশেষ কিছু উপাদান যা আমাদের এসিডিটি ও বুক জ্বালাপোড়া সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করবে।
প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস পানির সাথে এক চা চামচ পরিমাণ আপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে খাবার গ্রহণের আগে পান করুন। এতে করে ফলাফল হিসেবে দেখবেন, এসিডিটির জন্য আপনাকে আর কোনো বাড়তি ওষুধ খেতে হচ্ছে না।
২। আপেল ভিনেগার দিয়ে ওজন কমানোর উপায়
খাবার গ্রহণের আগে অথবা খাবারের সাথে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার ফলে অনেক সময় পর্যন্ত পেট ভরা থাকে অর্থাৎ দ্রুত ক্ষুধা পায় না। এছাড়াও, এটি পেটের মেদ কমাতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। একদল মানুষের উপর গবেষণা করে দেখা গেছে যে, প্রতিদিন ৩০ মিলি পরিমাণ আপেল ভিনেগার ১২ সপ্তাহ ধরে খাওয়ার ফলে পেটের মেদ ও শরীরের ওজন অনেকটাই কমে গেছে।
আর তাই, ওজন কমানোর জন্য দৈনিক ৩ বেলা খাবার গ্রহণের ঠিক আগে ১ চা চামচ পরিমাণ আপেল ভিনেগার ১ গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এক মাস পর পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন।
৩। স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে
আপেলের ভিনেগার রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বিশেষত ট্রাইগ্লিসারিড এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সেই সাথে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) এর পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা করে যা হার্টের জন্য উপকারী।
লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করে রক্তে সামান্য বেশি পরিমাণে কোলেস্টেরল পাওয়া গেছে কিন্তু চিকিৎসক ওষুধ সেবনের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন। এমতাবস্থায় সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপনের পাশাপাশি আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ উপকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।
৪। শরীরে ব্লাড সুগার বা চিনির পরিমাণ সঠিক রাখে
আপেলের ভিনেগারে রয়েছে শক্তিশালী এন্টি-গ্লাইসেমিক পদার্থ যা কিছু কিছু শর্করা ভাংতে বাঁধা দেয়। যার ফলে শরীরে ব্লাড সুগার বা চিনির স্তর সবসময় সঠিক থাকে।
আপনি যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ইনসুলিন নিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে ভিনেগার সেবনের জন্য চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে। কারণ, একইসাথে ইনসুলিন ও ভিনেগার গ্রহণের ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা একদম কমে গিয়ে জটিল সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
৫। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। ভিনেগারে রয়েছে ক্যাটেচিন, গেলিক এসিড, ক্যাফেইক এবং ক্লোরোজেনিক এসিডের মত কার্যকারী এন্টি-অক্সিডেন্ট পদার্থ যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সহজেই রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে।
৬। শরীরে পুষ্টি উপাদান বাড়াতে সাহায্য করে
আপেল সাইডার ভিনেগারে থাকা এসেটিক এসিড আপনি যা খাচ্ছেন তা থেকে প্রয়োজনীয় মিনারেল শরীরে শোষণ করে নিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই ভিনেগার সালাদের সাথে মিশিয়ে খেলে সালাদের সবজি থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ পুষ্টি শরীর নিতে পারে, কেননা এসেটিক এসিড বেশি পরিমাণে পুষ্টি শোষণ করতে পারে।
রূপচর্চায় ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আপেল সাইডার ভিনেগার
১. চুলে শ্যাম্পু দেয়ার পর আমরা অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারি। এতে করে চুলে কন্ডিশনিং হবে, তাছাড়া চুলের খুশকি যাবে এবং চুল নতুন করে গজাবে। একটি স্প্রে বোতলে অথবা কোন বোতলে ৩ চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার এবং এক কাপ পানি মিশিয়ে রেখে দিবেন। শ্যাম্পু করার পর স্প্রে করবেন পুরো চুলে।
২. এটি টোনার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। রাতে ঘুমানোর আগে মুখ পরিষ্কার করে টোনারের মত করে তুলো দিয়ে এই ভিনেগার লাগাবেন, তারপর ক্রিম লাগাবেন। এতে করে ত্বকের দাগ চলে যাবে এবং মুখের ব্রণ কমবে।
৩. দাঁতের হলদেটে ভাব দূর করার জন্য এর কোন তুলনা নেই।
৪. এক কাপ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার গোসলের ১০ মিনিট আগে সারা শরীরে মেখে রাখবেন। এতে করে রোদে পোড়া ভাব দূর হবে। তাছাড়া গোসলের পানিতে দিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। মন প্রফুল্লও হবে, রোদে পোড়া দাগও কমবে।
৫. এটি হাত ও পায়ে ম্যাসাজ করলে দেহের ক্লান্তি দূর হয়।
৬. ছেলেরা এটিকে আফটার শেভ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। সমপরিমাণ পানি এবং অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার নিয়ে বোতলে ভরে রাখুন। শেভ করার পর দিন।
৭. প্রতিদিন ত্বকে একে ব্যবহার করলে ত্বকে কোন মরা কোষ থাকে না, ত্বক উজ্জ্বল হয়, বলিরেখা দূর করে, স্কিনের PH-এর সমতা রক্ষা করে, লোমকূপ ছোট করে, মুখে ব্যাকটেরিয়ার প্রকোপ কমে যায়।
৮. মুখের নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ দূর করতে এটি সামান্য পানির সাথে মিশিয়ে গার্গেল করুন।
৯. পেডিকিওর করতে পানির মধ্যে এই ভিনেগার মিশিয়ে করতে পারুন। এতে করে পা পরিষ্কার হবে ভালো করে, পায়ের ত্বক উজ্জ্বল হবে, পায়ের দুর্গন্ধ দূর হবে।