গবেষণা বলছে যে ৩০ বছর বয়সের পর থেকে একজন পুরুষের যৌন বা প্রজনন হরমোন বা টেস্টোস্টেরন (Testosterone) উৎপাদন কমতে থাকে। আবার বয়স বেড়ে যাওয়া ছাড়াও অন্যান্য আরো কিছু বিষয়ের সাথে টেস্টোস্টেরন কমে যাওয়ার যোগসূত্র রয়েছে। যেমনঃ
- উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস
- থাইরয়েডের সমস্যা
- অতিরিক্ত ওজন (Obesity)
- ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস
- কতিপয় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপির কুফল
- অন্ডকোষে আঘাত লাগা ইত্যাদি
আপনার শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন কমে গেছে কিনা তা কিভাবে বুঝবেন? টেস্টোস্টেরন উৎপাদন বৃদ্ধির কি কি উপায় রয়েছে? কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা বিপদজনক হতে পারে? ইত্যাদি বিষয়গুলো সহ পুরুষের প্রজনন হরমোন (টেস্টোস্টেরন) বাড়াতে সহায়তা করবে এমন ১৩ টি প্রাকৃতিক খাবার সম্পর্কে এই অনুচ্ছেদে আলোচনা করা হয়েছে।
যৌন হরমোন উৎপাদন কমে যাওয়ার লক্ষণ কি কি?
টেস্টোস্টেরন (Testosterone) হরমোন মূলত অন্ডকোষের মধ্যে উৎপন্ন হয়ে থাকে। কোনো কারণবশত এই হরমোন উৎপাদন কমে গেলে কতিপয় শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ দেখা যায়। যেমনঃ
- লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা বা ED (erectile dysfunction)
- যৌন ইচ্ছা কমে যায়
- অন্ডকোষ ছোট হতে থাকে
- হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়
- মাংসপেশীর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়
- দুর্বলতা ও ক্লান্তি বোধ
- বিষন্নতা ও উদ্বিগ্নতা
- চুল পড়া ইত্যাদি
উল্লেখিত লক্ষণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণটি হলো লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা বা যৌন দূর্বলতা কারণ টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রধান কাজ হলো পুরুষের যৌন সক্ষমতা বজায় রাখা। যৌন দূর্বলতা দেখা দিলে আমাদের দেশের অধিকাংশ পুরুষ হীনমন্যতায় ভোগেন কিন্তু সমাধানের জন্য কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না। তবে চলুন এই পর্যায়ে টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদন বৃদ্ধির উপায় সমূহ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পুরুষের যৌন হরমোন (টেস্টোস্টেরন) বৃদ্ধির উপায়
টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মোটামুটি ভাবে দুইটি পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। তবে এর বাইরেও আরো অনেক পদ্ধতি রয়েছে যে বিষয়গুলোর ভালো মন্দ ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
১. হরমোন থেরাপি
প্রথমত যে পদ্ধতিটি রয়েছে তা হলো টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা খুব বেশি পরিমাণে কমে গেলে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী হরমোন থেরাপি নেওয়া। আপনার শরীরে টেস্টোস্টেরন এর মাত্রা নির্ণয়ের জন্য একটি রক্ত পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন হবে যাকে Testosterone test বলা হয়। তবে এর সাথে সাথে থাইরয়েডের টেস্ট বা TSH (thyroid stimulating hormone) করানোর নির্দেশনা দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। কারণ টেস্টোস্টেরন উৎপাদনের ক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্রন্থির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
২. ঘরোয়া প্রতিকার
দ্বিতীয় উপায় হলো নানাবিধ প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বন করার মাধ্যমে টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদন বৃদ্ধি করা। হরমোন থেরাপির তুলনায় প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বন করা ভালো। কারণ হরমোন থেরাপি নেওয়ার মানে হলো বাইরে থেকে শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন সরবরাহ করা। এতে করে শরীরে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদন কমে যেতে থাকে। পক্ষান্তরে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে শরীরের মধ্যে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন বৃদ্ধি করার চেষ্টা করা হয়।
সতর্কতা
এছাড়াও অন্যান্য পদ্ধতি বলতে মূলত প্রাকৃতিক পদ্ধতির নামে বিভিন্ন অবৈজ্ঞানিক ও ক্ষতিকর চিকিৎসাকে বোঝানো হয়েছে। যৌন দূর্বলতা দূর করে বা টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন বৃদ্ধি করবে এমন নিশ্চয়তা দিয়ে রাস্তা ঘাটে অহরহ হকাররা নানাবিধ ওষুধ বিক্রি করছে যা কখনোই উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে না বরং তা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। আবার বাজারে হরমোনের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তাকারী সাপ্লিমেন্ট (testosterone boosting supplements) কিনতে পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে এই সমস্ত সাপ্লিমেন্ট কিনে খাওয়া উচিত নয় কারণ তাতে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। আর তাই টেস্টোস্টেরন এর অভাব জনিত সমস্যা সমাধানে প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বন অথবা একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রাকৃতিক উপায়ে যৌন হরমোন বৃদ্ধি
- পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো জরুরি (প্রতি রাতে অন্তত ৭ থেকে ৯ ঘন্টা)
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে
- পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
- শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
- মানসিক চাপ (Stress) যতটা সম্ভব কমানোর চেষ্টা করতে হবে
- নিয়মিত কিছুক্ষণ সময় ধরে রোদ পোহানো যা শরীরে ভিটামিন ডি উৎপাদন করে
- ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করা উচিত
প্রাকৃতিক উপায়গুলোর মধ্যে খাবারের বিষয়টি নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন রয়েছে যে কোন কোন খাবার সবচেয়ে বেশি উপকারী হতে পারে? তো চলুন এই অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু ১৩ টি খাবারের আদ্যোপান্ত নিয়ে কথা বলা যাক।
১. চর্বিযুক্ত মাছ
আমিষ ও চর্বির উৎস হিসেবে মাছ একটি উত্তম খাবার। অধিকাংশ চর্বি (স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্র্যান্স ফ্যাট) জাতীয় খাবার শরীরের জন্য ক্ষতিকর কিন্তু মাছের মধ্যে যে ফ্যাট রয়েছে তা উপকারী। মাছের মধ্যে বিদ্যমান ফ্যাট কে বলা হয় ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড যা শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আর তাই সামুদ্রিক মাছ সহ যেকোনো ধরনের মাছ নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সপ্তাহে অন্তত ২ দিন মাছ খাওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন US department of agriculture বা আমেরিকান কৃষি অধিদপ্তর।
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড ছাড়াও মাছে রয়েছে ভিটামিন ডি এবং জিংক। এই উপাদান দুটি একজন পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে। উল্লেখ্য চর্বি বা ফ্যাটের অনেকগুলো প্রকরণ রয়েছে যার মধ্যকার ট্রান্স ফ্যাট শরীরের জন্য ক্ষতিকর। সেই সাথে তা টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন ব্যহত করে। আর তাই ট্র্যান্স ফ্যাট রয়েছে এমন খাবার বর্জন করুন।
২. ডিম
পুষ্টিবিদ Kim Pearson এর মতে কুসুম সহ ডিম খাওয়ার ফলে পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে দিনে একজন পুরুষের জন্য সর্বোচ্চ ৩ টি ডিম খাওয়া যেতে পারে বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তবে ডিমের কুসুম খাওয়ার ফলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বা LDL (low density lipoprotein) এর মাত্রা বাড়তে থাকে যা হার্টের রোগ (উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদি) সৃষ্টি করে। সুতরাং যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি তাদের বেলায় চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। সেই সাথে যারা ডায়েট কন্ট্রোল করা শুরু করছেন তাদের জন্য ডিম ভাজি না করে বরং সিদ্ধ করে খাওয়া উচিত। কারণ ভাজার জন্য তেল ব্যবহার করতে হয় যা ক্যালরি বাড়িয়ে দেয়।
৩. আয়রন বা লৌহ সমৃদ্ধ খাবার
আয়রন (Iron) রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে অংশগ্রহণ করে আর আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের মাধ্যমে শরীরে আয়রনের চাহিদা পূরণ হয়। আবার কারো শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে অভাব জনিত লক্ষণ দেখা দেয় যাকে মেডিকেলের ভাষায় রক্তস্বল্পতা বা Anemia বলে। রক্তস্বল্পতার সাথে শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদনের যোগসূত্র রয়েছে। অর্থাৎ শরীরে রক্তস্বল্পতা থাকলে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন কমে যায়। আর তাই নিয়মিত আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। তবে শরীরে আয়রনের অভাব না থাকা সত্ত্বেও টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে আয়রন ট্যাবলেট (Iron supplement) গ্রহণ করা যাবে না। কারণ অহেতুক আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার ফলে শরীরে আয়রনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
৪. কলিজা
আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের একটি ভালো উৎস হলো কলিজা। শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণের চেয়ে কলিজা খাওয়া ভালো। কারণ আয়রন ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কোষ্টকাঠিন্য দেখা দেয় কিন্তু কলিজা খাওয়ার ফলে এই সমস্যা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সেই সাথে ভিটামিন ডি, জিংক এবং ভিটামিন বি১২ এর একটি ভালো উৎস হলো কলিজা। আর এই উপাদান গুলো টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে যাদের রক্তে কোলেস্টেরল (LDL) এর পরিমাণ বেশি রয়েছে তাদের জন্য কলিজা না খাওয়াই ভালো।
৫. ননীযুক্ত দুধ, দই এবং আইসক্রিম
দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার দই, আইসক্রিম ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট ও মিনারেলস রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে ভিটামিন ডি যা টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে। তবে কারো ক্ষেত্রে ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে দুধ খাওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকের নিষেধাজ্ঞা থাকলে তা মেনে চলা উচিত। সেই সাথে অনেকের ক্ষেত্রে দুধ খেলে পেটে হজমের সমস্যা সৃষ্টি হয়। বিশেষত আইবিএস (IBS- irritable bowel syndrome) এর রোগীদের জন্য দুধ না খাওয়াই ভালো।
৬. চিজ বা পনির
চিজ (Cheese) বা পনির দুধ থেকে তৈরি করা একটি খাবার যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে চর্বি, প্রোটিন ও ক্যালরি রয়েছে। চিজের ক্ষেত্রেও প্রায় দুধের মতই উপকারিতা এবং অপকারিতা রয়েছে। আর তাই যাদের ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের জন্য এটি বাদ দিয়ে বরং অন্য খাবার খাওয়া উচিত। বিশেষত নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত খাবারের দিকে মনোযোগ দেওয়া ভালো।
৭. সবুজ শাকসবজি
স্বাস্থ্যসম্মত খাবার হিসেবে শাকসবজির জুড়ি নেই। নিয়মিত শাকসবজি খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে যা একজন পুরুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সবুজ শাকসবজি থেকে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায় যা শরীরে ফ্রি রেডিক্যাল (Free radicals) এর সংখ্যা বাড়তে দেয় না এবং প্রদাহ নাশক হিসেবে কাজ করে। আর ফ্রি রেডিক্যাল এবং প্রদাহের ফলে শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন কমে যায়।
৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক ৩৯৯ জন পুরুষের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে যে যাদের শরীরে বেশি পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে তাদের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিমাণ বেশি রয়েছে। পক্ষান্তরে যাদের শরীরে তুলনামূলক কম পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিমাণ কম দেখা গেছে। সুতরাং টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধি করতে চাইলে সকল বয়সের পুরুষদের জন্য ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে নিয়মিত সবুজ শাকসবজি খেতে হবে।
৮. এভোকেডো
এভোকেডো (Avocados) এর মধ্যে ভালো মানের চর্বি ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন বাড়ায়। সেই সাথে এভোকেডো থেকে বোরন (boron) নামক একটি খনিজ উপাদান পাওয়া যায় যা শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন এবং তা ক্ষয় হয়ে যাওয়া রোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে বোরন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের মাধ্যমে শরীরে টেস্টোস্টেরন এর পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সাপ্লিমেন্ট হিসেবে গ্রহণের জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন বলে মনে করা হয়। তবে প্রাকৃতিক ভাবে কোনো খাবারের মধ্যে বোরন থাকলে তা খেতে উৎসাহিত করা হয়েছে। আর সেই হিসেবে টেস্টোস্টেরন বাড়াতে নিয়মিত এভোকেডো খাওয়ার অভ্যাস উপকারিতা বয়ে আনতে পারে।
৯. সূর্যমুখী বীজ
সূর্যমুখী বীজ থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম পাওয়া যায়। আর ভিটামিন ই পুরুষের যৌন স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। অনেকেই চুলপড়া বন্ধ করতে বা যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নিজে নিজে ফার্মেসি থেকে ভিটামিন ই ক্যাপসুল কিনে খেয়ে থাকেন। কিন্তু চিকিৎসকের নির্দেশনা ব্যতীত এভাবে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত নয় কারণ তাতে শরীরের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। পক্ষান্তরে প্রাকৃতিক উৎস তথা খাবার থেকে ভিটামিন গ্রহণ করলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয় না। আবার সূর্যমুখী বীজের মধ্যে থাকা সেলেনিয়াম উপাদানটি টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
১০. বাতাবি লেবু এবং কমলার রস
ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং প্রদাহ নাশক হিসেবে কাজ করে। সেই সাথে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি এর উপস্থিতি টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে থাকে। লেবু, বাতাবি লেবু, কমলা বা কমলার রস, মালটা, আঙ্গুর ইত্যাদি খাবার গুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। আর ভিটামিন সি পানিতে দ্রবণীয় একটি ভিটামিন যা শরীরে সংরক্ষিত থাকে না। সুতরাং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন খাওয়া উচিত।
১১. ডাল এবং মটরশুঁটি
আমিষের উদ্ভিজ্জ উৎস হিসেবে ডাল ও মটরশুটি উত্তম প্রকৃতির খাবার। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে ফলে যারা নিরামিষাশী ব্যক্তি তাদের ক্ষেত্রে এটি শরীরের রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়তা করে। আর রক্তস্বল্পতার সাথে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন কমে যাওয়ার বিষয়টি ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও ডাল এবং মটরশুটিতে রয়েছে জিংক যা শুক্রাণুর গুণগত মান ভালো রাখে এবং যৌন হরমোন উৎপাদানে সহায়তা করে।
১২. ডালিম / আনার / বেদানা
ডালিম ফলটি আনার বা বেদানা নামেও পরিচিত যাকে ইংরেজিতে Pomegranate বলে। এটি নিঃসন্দেহে একটি পুষ্টিকর খাবার যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সহ প্রদাহ নাশক হিসেবে কাজ করে। ডালিমের মধ্যে polyphenols নামক উপাদানটি একজন পুরুষের শারীরিক সক্ষমতা অনেকটাই বৃদ্ধি করতে পারে। সেই সাথে এর মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধী গুনাবলী রয়েছে।
১৩. দারুচিনি
দারুচিনি (Cinnamon) একটি মশলা জাতীয় উপাদান যা খাবারের স্বাদ ও গন্ধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। সেই সাথে পুরুষের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তথা টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন বাড়াতেও দারুচিনির ভূমিকা রয়েছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। ইরানীয়ান রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী দারুচিনি পুরুষের যৌন হরমোন বৃদ্ধি করে এবং শুক্রাণুর গুণগত মান বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
এই গবেষণার ভিত্তিতে যৌন হরমোনের উৎপাদন এবং শুক্রাণু বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন শরীরের ওজন অনুযায়ী প্রতি কেজিতে ৭৫ মিলিগ্রাম দারুচিনি খাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ আপনার শরীরের ওজন ৬০ কেজি হলে আপনার জন্য নির্দেশিত মাত্রা হলো ৬০×৭৫ মিলিগ্রাম বা ৪৫০০ মিলিগ্রাম তথা ৪.৫ গ্রাম। উল্লেখ্য গবেষণাটি প্রাণিদের উপর করা হয়েছিলো আর তাই শুধুমাত্র এই গবেষণার ভিত্তিতে প্রতিনিয়ত ৪.৫ গ্রাম পরিমাণ দারুচিনি না খাওয়াই উত্তম। বরং প্রতিদিনের খাবারের মধ্যে যে পরিমাণে দারুচিনি ব্যবহার করা হয় তা থেকে যতটুকু উপকারিতা পাওয়া যায় সেই যথেষ্ট।
যৌন হরমোন (টেস্টোস্টেরন) বাড়াতে চাইলে কোন খাবার বর্জন করতে হবে?
টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য যেমন কতিপয় খাবার সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে তেমনি ভাবে অনেক খাবার রয়েছে যা এই হরমোনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। যৌন সক্ষমতা ঠিক রাখতে তথা টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন ভালো রাখতে যে সব খাবার বর্জন করা উচিত তা হলোঃ
প্রক্রিয়াজাত খাবার:
প্রক্রিয়াজাত করা খাবারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে লবণ ও চিনি থাকে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। সেই সাথে এর মধ্যে ক্ষতিকর ট্র্যান্স ফ্যাট রয়েছে যা শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়।
প্লাস্টিকের পাত্রে রাখা খাবার:
প্লাস্টিক ব্যবহারে সুবিধাজনক হলেও এটি পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্লাস্টিকের পাত্রে রাখা খাবার গ্রহণের মাধ্যমে শরীরে bisphenol A নামক ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান প্রবেশ করতে পারে। আর এই উপাদানটি শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন কমিয়ে দেয় বলে গবেষণায় পাওয়া গেছে। সুতরাং যতটা সম্ভব প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
মদ্যপানের অভ্যাস:
মদ্যপানের ফলে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন কমে যায়। আর তাছাড়া এটি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই মদ্যপানের অভ্যাস অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে।
নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে যেমন সুস্থ থাকা যায় তেমনি ভাবে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন বাড়ানো তথা যৌন স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব। যৌনতা নিয়ে লজ্জা পেয়ে ভুলের মধ্যে না থেকে বরং সঠিক জ্ঞান অর্জন করুন এবং সেই সাথে যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে কোনো সমস্যায় আক্রান্ত হলে একজন যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
Leave a Reply