ছাত্রীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করার পর অন্য একজনকে বিয়ে করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ‘যৌন নিপীড়ন ও প্রতারণার’ বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রী। তবে অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি অভিযুক্ত শিক্ষক।
গত ৮ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপারসনের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে এসব কথা বলেন বিভাগের সাবেক এক ছাত্রী (২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ)। যৌন নিপীড়ন ও প্রতারণার ঘটনায় বিভাগের এক সহকারী অধ্যাপককে অভিযুক্ত করেন ওই ছাত্রী। অভিযোগের অনুলিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন জিয়া রহমান ও প্রক্টর মাকসুদুর রহমানকেও পাঠানো হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী বলেন, বিভাগের শিক্ষক হওয়ায় তিনি তাঁকে ক্যারিয়ার ও উচ্চশিক্ষা বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, একাকিত্ব, উচ্চশিক্ষাসহ নানা বিষয়ে কথা বলতেন। ধীরে ধীরে ওই শিক্ষকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আগের চেয়ে ভালো হয়। এরপর গত বছরের ২৫ এপ্রিল তিনি তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন।
ছাত্রী লিখেছেন, ‘কিন্তু আমি আমাদের ধর্মীয় ভিন্নতার বিষয়টি সামনে এনে প্রস্তাব নাকচ করে দিই। আমি তাঁকে স্বাভাবিক আচরণ করতে বলা সত্ত্বেও বিভিন্ন সময় ফোন করে, মেসেজ দিয়ে আমার প্রতি তাঁর দুর্বলতার কথা শেয়ার করতেন। একপর্যায়ে আমিও তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে যাই। পরে বিয়ের প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে গত বছরের ৩ অক্টোবর আমাদের সম্পর্ক শুরু হয়।’
অভিযোগে ওই ছাত্রী আরও বলেন, ‘সম্পর্কের কিছুদিন পর তিনি আমাকে তাঁর বাসায় আসার প্রস্তাব দেন। আমি রাজি না হলে তিনি আমাকে নিশ্চিত করেন যে তাঁর বাসা সম্পূর্ণ নিরাপদ। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে তাঁর দ্বারা আমার কোনো ক্ষতি হবে না। আমি তারপরও রাজি হইনি। পরে শরীর খারাপের কথা বলে তিনি আমাকে বাসায় যেতে প্রভাবিত করেন। গত বছরের ৫ নভেম্বর তাঁর বাসায় গেলে তিনি প্রথমদিকে স্বাভাবিক আচরণ করলেও পরে আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এ ঘটনায় আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। তখন তিনি আমাকে বিয়ে করবেন বলে আবারও আশ্বস্ত করেন এবং এমন কথাও বলেন যে প্রয়োজনে দেশের বাইরে বসবাস করবেন। পরে তাঁকে বিয়ের কথা বললে তিনি বিভিন্নভাবে কালক্ষেপণ শুরু করেন এবং বিয়ের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতে চান।’
আবার শারীরিক সম্পর্কে রাজি না হলে ওই শিক্ষক তাঁকে নানাভাবে ‘ইমোশনালি ম্যানুপুলেট’ করে তা করতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন ওই ছাত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে সর্বশেষ চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর তিনি তাঁর বাসায় আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন। ১৭ সেপ্টেম্বর আবারও একই প্রস্তাব দিলে আমি প্রত্যাখ্যান করি। পরে ২২ সেপ্টেম্বর তিনি আমার কাছে গোপন করে অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করেন। এটি আমি জানতে পারি ২৪ সেপ্টেম্বর। এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হলে আমাকে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।’
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অভিযুক্ত শিক্ষক বুধবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কোনো মন্তব্য নেই।উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপারসন বিদেশে থাকায় অভিযোগের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন জিয়া রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। আমরা একটা ভালো প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। ভুক্তভোগী যাতে ন্যায়বিচার পান, সেভাবেই আমরা কাজটা করছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে।’
Leave a Reply