প্রত্যেক মানুষ তার জীবনে কম বেশি মানসিক চাপের (Mental stress) সম্মুখীন হয়ে থাকে যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নানাবিধ শারীরিক, মানসিক ও আচরণগত সমস্যা সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মানসিক চাপ স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং কি কি লক্ষণ দেখা দিলে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট (Psychiatrist) বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত সেই ব্যাপারে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই অবগত নয়।
এই অনুচ্ছেদে মানসিক চাপ একজন পুরুষের স্বাস্থ্যের ওপর কি ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে এবং মানসিক চাপ কমানোর উপায় সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে একজন পুরুষ হিসেবে আপনার ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার কতটুকু ঝুঁকি রয়েছে তা জানতে অনুচ্ছেদটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
মানসিক চাপ কাকে বলে?
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক (Cleveland Clinic) এর সংজ্ঞা অনুযায়ী মানসিক চাপ একটি স্বাভাবিক ব্যাপার যা একজন মানুষের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন বা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে শারীরিক ও মানসিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দেয়। মানসিক চাপ একজন মানুষকে নতুন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলতে সহায়তা করে এবং কঠোর পরিশ্রমী করে তোলে। তবে মানসিক চাপ একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় যখন তা ক্রমাগত চলতে থাকে এবং সহজে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় না।
আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশন (APA- American psychological association) এর তথ্য মতে মানসিক চাপের তিনটি প্রকারভেদ রয়েছে।
১। Acute stress: সবচেয়ে কমন প্রকৃতির মানসিক চাপ যা অল্পক্ষণ স্থায়ী হয় এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব তুলনামূলক খুবই কম। এই ধরনের মানসিক চাপের উদাহরণ হলো রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকা অথচ অফিসে পৌঁছাতে হবে ঠিক সময়ে অথবা অফিসের কাজে টাইম বাউন্ডারি অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার তাগিদ ইত্যাদি।
২। Episodic acute stress: এই ধরনের মানসিক চাপের অন্তর্ভুক্ত হলো প্রতিনিয়ত Acute stress এর ব্যাপারগুলো ঘটতে থাকা যা তুলনামূলক বেশি ক্ষতিকর।
৩। Chronic stress: এই ধরনের মানসিক চাপ সবচেয়ে মারাত্মক প্রকৃতির হয়ে থাকে যা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে। যেমনঃ দাম্পত্য জীবনে প্রতিনিয়ত কলহের সৃষ্টি, বিবাহ বিচ্ছেদ, অসন্তোষজনক কর্মজীবন ইত্যাদি।
মানসিক চাপের লক্ষণ
মানসিক চাপের লক্ষণ সম্পর্কে প্রত্যেক সচেতন মানুষের জন্য জ্ঞান থাকা জরুরি কেননা শুধুমাত্র লক্ষণ দেখে আপনাকে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট এর পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। মানসিক চাপ যে একটি স্বাস্থ্য সমস্যা এবং এর জন্য যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সেই বিষয়টি এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে খুব বেশি প্রচলিত নয়। আর তাই লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরেও অধিকাংশ মানুষ কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না যা ক্রমাগত স্বাস্থ্যের জন্য জটিলতর সমস্যা সৃষ্টির কারণ হতে থাকে।
পুরুষরা মানসিক চাপে থাকলে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়
মানসিক চাপের ফলে শারীরিক, মানসিক ও আচরণ জনিত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। একজন পুরুষ হিসেবে আপনার ক্ষেত্রে কি কি লক্ষণ দেখা দিলে সাইকিয়াট্রিস্ট এর পরামর্শ গ্রহণ করবেন সেই বিষয়গুলো নিচে তুলে ধরা হলোঃ
শারীরিক লক্ষণ
- মাথাব্যথা (Headache)
- কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়া
- পেটে ব্যথা
- বুক জ্বালা (Heartburn)
- ঘাড়, পিঠ ও বুকে ব্যথা
- মাংসপেশীর অস্বাভাবিক সংকোচন প্রসারণ
- ক্লান্তি (Fatigue)
- অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
- লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা (ED- Erectile dysfunction) ইত্যাদি
উল্লেখিত লক্ষণগুলো মানসিক চাপ ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে দেখা যায়। তাহলে কিভাবে বুঝতে পারবেন যে কোন লক্ষণটি মানসিক চাপকে নির্দেশ করছে? এই প্রশ্নের একটি সহজ সমাধান হলো এই যে, শরীরে কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে প্রথমত একজন চিকিৎসক (General physician) এর শরণাপন্ন হতে হবে। অতঃপর চিকিৎসক যদি উক্ত লক্ষণের জন্য শারীরিক কোনো রোগকে দায়ী মনে না করেন সেক্ষেত্রে তা মানসিক চাপ অথবা অন্য কোনো মানসিক সমস্যার দরুন হতে পারে বলে ধরে নেওয়া যায়। এই পর্যায়ে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট এর শরণাপন্ন হয়ে রোগ নির্ণয় এবং যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
মানসিক লক্ষণ
- কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে ব্যর্থতা
- উদ্বিগ্নতা (Anxiety)
- অহেতুক দুঃখবোধ
- বিষন্নতা (Depression)
- অস্থিরতা
- রাগ
- যৌন ইচ্ছা কমে যায় ইত্যাদি
ব্যবহারে পরিবর্তন
- খাবারের প্রতি অনীহা প্রকাশ পায় অথবা অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস
- ধুমপান করা ও মাদকদ্রব্য গ্রহণ
- রাতে ঘুম কম হয় অথবা দিন রাতের বেশিরভাগ সময় ঘুমানো
- ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখা
- অসামাজিক কার্যকলাপ
- একা একা থাকার প্রবণতা
- দাঁতে দাঁত চেপে শব্দ করা (grinding teeth) ইত্যাদি
মানসিক চাপ পরিমাপের উপায় কি?
শারীরিক রোগের ক্ষেত্রে ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করার মাধ্যমে নিশ্চিত ভাবে রোগ ডায়াগনসিস করা যায় কিন্তু মানসিক চাপ অথবা অন্যান্য মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে তেমন কোনো সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা করা যায় না। তবে এক্ষেত্রে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট আপনাকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করার মাধ্যমে সমস্যা সম্পর্কে বুঝতে চেষ্টা করেন। সাধারণত সাইকিয়াট্রিস্টরা সমস্যার কারণ, পূর্ব ইতিহাস, জীবন যাপনের ধরন, কর্মক্ষেত্র, দাম্পত্য জীবন, ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ, ধর্মীয় মনোভাব, ঘুম, নেশা ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রশ্ন করে থাকেন। সঠিক ভাবে সমস্যা নির্ণয় ও যথাযথ সমাধান পাওয়ার জন্য একজন রোগী হিসেবে আপনাকে সাইকিয়াট্রিস্ট এর সমস্ত প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে হবে। মনে রাখবেন কোনো বিষয়ে না বুঝে কিছু বলা যাবে না আবার কোনো তথ্য গোপন রাখা উচিত হবে না।
উল্লেখ্য আপনার শরীরে দেখা দেওয়া লক্ষণগুলো কোনো শারীরিক সমস্যার দরুন নয় এই বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ক্ষেত্র বিশেষে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোর নির্দেশনা দিতে পারেন। বিশেষত শরীরে হরমোনের মাত্রা, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি বিষয়গুলোর জন্য নিম্নলিখিত পরীক্ষা গুলো করানো লাগতে পারে। যেমনঃ
- Blood pressure
- RBS (Random blood sugar)
- ECG (Electrocardiogram)
- Lipid profile
- TSH (Thyroid stimulating hormone)
- Testosterone test
- Prolactin test ইত্যাদি
মানসিক চাপের ক্ষতিকর প্রভাব
মানসিক চাপের শুধুমাত্র ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে তা নয় বরং এর কিছু উপকারিতাদও রয়েছে। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত সাইকোলজিস্ট ডা নাতাশা বিজলানির (Dr Natasha Bijlani) মতে মানসিক চাপ কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে যদি সেটিকে ভালো ভাবে গ্রহণ করতে পারা যায়। তবে অতিরিক্ত মানসিক চাপ অথবা মানসিক চাপ সামলাতে অক্ষম হলে সেক্ষেত্রে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
মানসিক চাপে থাকলে পুরুষের স্বাস্থ্যের কেমন ক্ষতি হয়?
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ একজন পুরুষের স্বাস্থ্যের উপর মারাত্বক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই ব্যাপারে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন সময়ে করা গবেষণালব্ধ তথ্য সমূহ ধারাবাহিক ভাবে উপস্থাপন করা হলোঃ
প্রস্টেট ক্যান্সার
২০১৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে মানসিক চাপ স্নায়ুতন্ত্রের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে যার ফলে পুরুষ মানুষের প্রস্টেট ক্যান্সার (Prostate cancer) হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। মানসিক চাপ মস্তিষ্কে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান নিঃসরণে উদ্দীপনা জোগায় যা ক্যান্সার সৃষ্টি করতে এবং সেই সাথে সারা শরীরে দ্রুত গতিতে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়তে সহায়তা করে থাকে।
ইরেক্টাইল ডিসফাংশন (Erectile dysfunction)
ইরেকটাইল ডিসফাংশন (ED- Erectile dysfunction) একটি মেডিকেল টার্ম যা দ্বারা বোঝানো হয় লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা বা একজন পুরুষের জন্য যৌন সম্পর্ক স্থাপনে অক্ষমতা। নানাবিধ কারণে ইরেকটাইল ডিসফাংশন হয় তবে তার মধ্যে একটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো মানসিক চাপ যার ফলে যে কোনো বয়সের পুরুষের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হতে পারে। বিশেষত মধ্যবয়সী পুরুষদের ক্ষেত্রে পারিবারিক, অর্থনৈতিক এবং কর্মক্ষেত্রের অতিরিক্ত চাপের প্রভাবে স্বাভাবিক যৌন জীবন ব্যহত হয় অর্থাৎ ED সমস্যা দেখা দেয়। মানসিক চাপ কিভাবে ইরেকটাইল ডিসফাংশন সৃষ্টি করে তা বোঝার জন্য পুরুষের যৌন সক্ষমতার বিষয়টি জানা জরুরি।
একজন পুরুষের ক্ষেত্রে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য মস্তিষ্ক থেকে সিগন্যাল পাঠানো হয় যা লিঙ্গের মধ্যে রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে লিঙ্গ উত্থান ঘটিয়ে থাকে। কিন্তু মানসিক চাপের প্রভাবে মস্তিষ্ক থেকে সিগন্যাল পাঠানো কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে যার ফলে রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে লিঙ্গ উত্থান হয় না। এছাড়াও মানসিক চাপ পুরুষের প্রধান যৌন হরমোন (Testosterone) উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করে যার ফলে যৌন সক্ষমতা কমে যায়।
পুরুষের ইনফারটিলিটি
মানসিক চাপের প্রভাবে যৌন হরমোন (Testosterone) নিঃসরণ কমে যায় যা পুরুষের ইনফারটিলিটি (Infertility) সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ যৌন হরমোনের অভাবে শুক্রাণু (Sperms) উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটে। যার ফলে স্ত্রীর জরায়ুতে ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়ে ভ্রূণ গঠনের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ এবং ভালো মানের শুক্রাণু থাকে না। আর শুক্রাণুর সংখ্যা এবং গুনগত মান কমে যাওয়া মানেই পুরুষের ইনফারটিলিটি। উল্লেখ্য খুব সহজ একটি পরীক্ষার মাধ্যমে শুক্রাণুর পরিমাণ এবং গুনগত মান সম্পর্কে জানা যায়। পরীক্ষাটির নাম হলো Semen analysis যার জন্য নমুনা হিসেবে বীর্য সংগ্রহ করা হয়।
হৃদরোগ (Heart disease)
সব ধরনের মানসিক চাপ হার্ট (Heart) এর জন্য ক্ষতিকর। বিশেষত মানসিক চাপের ফলে রক্ত চাপ (Blood pressure) বেড়ে যায় এবং রক্তে কোলেস্টেরলের ভারসাম্য নষ্ট হয় যা হার্টের রোগ সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ। প্রতিনিয়ত মানসিক চাপের কুফলে হার্টের রক্তনালীতে প্রদাহ (Inflammation) হয় যা একসময়ে হার্ট অ্যাটাকের মতো প্রাণঘাতী পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। আর তাই হার্টের রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য সর্বাবস্থায় মানসিক চাপ পরিহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে।
দীর্ঘস্থায়ী পরিপাক ক্রিয়ার সমস্যা (Chronic gastrointestinal problems)
পরিপাকতন্ত্র বলতে খাবার গ্রহণ, হজম ও নিষ্কাশনের সাথে সম্পর্কিত অঙ্গগুলোকে বোঝানো হয়ে থাকে। মানসিক চাপের ফলে পরিপাকতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যঘাত ঘটে অর্থাৎ খাবার হজমের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম নিঃসরণ হয় না। যার ফলে খাবারের প্রতি অনীহা, বমি বমি ভাব, বমি, পেটে ব্যথা, বুক জ্বালা, কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। পাকস্থলীতে আলসার (Peptic ulcers) একটি জটিলতর রোগ যা প্রধানত মানসিক চাপের ফলে হয়ে থাকে। এছাড়াও IBS (Irritable bowel syndrome) মতো যন্ত্রণাদায়ক পেটের পীড়া সৃষ্টি হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপের কুফলে।
দীর্ঘস্থায়ী এবং তীব্র ব্যাথার উৎস (Chronic pain)
অনেক মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে কোনো রোগ বা সমস্যা ছাড়াই শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা হচ্ছে যার কারণ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। মানসিক চাপের সাথে শরীরে ব্যথার অনুভূতি বেড়ে যাওয়ার বিশেষ যোগসূত্র রয়েছে। যার ফলে মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মাথাব্যথা, মাইগ্রেনের সমস্যা, ঘাড়ে ব্যথা, পিঠ এবং শরীরের বিভিন্ন মাংসপেশীতে ব্যথা বোধ হয়ে থাকে।
ঠান্ডা এবং ইনফেকশন
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপের ফলে মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে সহজেই ঠান্ডা লাগা সহ ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়।
পুরুষের মানসিক চাপ কমানোর উপায়
মানসিক চাপ পুরোপুরি বাদ দেওয়া যায় না তবে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে অতিরিক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব হয়। নিম্নলিখিত উপায় সমূহ আপনার মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করবে বলে আশা করা যায়।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপের সৃষ্টি করে এমন কাজ বা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিন। একজন পুরুষের পক্ষে পরিবারের সব দায়িত্ব, সামাজিক কর্মকাণ্ড, অফিস সহ সবদিক সামলানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। আর তাই নিজের সক্ষমতা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করুন এবং প্রয়োজন সাপেক্ষে অন্যদের সহায়তা গ্রহণ করুন।
- পরিবার, বন্ধু, কলিগ, আত্মীয় স্বজন সকলের সাথে আন্তরিক ভাবে সময় কাটানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। যাদেরকে বিশ্বস্ত মনে করেন তাদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও পরামর্শ করতে পারেন।
- কাজের ফাঁকে সময় বের করে মাঝে মধ্যে কোথাও ঘুরে আসুন। এতে করে মানসিক চাপ কমবে, ক্লান্তি দূর হবে এবং পুনরায় কাজ করার মানসিকতা তৈরি হবে।
- নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীর সুস্থ রাখুন। সেই সাথে ব্যায়াম করার ফলে শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
- মানসিক চাপের প্রভাব কাটাতে যোগব্যায়াম, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম (Breathing exercise) ইত্যাদি সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- শরীরের সমস্যা হলে যেমন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয় তেমনি ভাবে মানসিক চাপ থেকে বেড়িয়ে আসতে সাইকিয়াট্রিস্ট এর পরামর্শ গ্রহণ করুন।
কাদের ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যা হওয়ার অধিক ঝুঁকি রয়েছে?
মানসিক চাপ সহ অন্যান্য আরো অনেক ধরনের মানসিক সমস্যা রয়েছে যা অনেক পুরুষের ক্ষেত্রেই হতে পারে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি রয়েছে। যেমনঃ
- যে সমস্ত পুরুষ পূর্বে কোনো শারীরিক অথবা মানসিক আঘাতের সম্মুখীন হয়েছেন
- যাদের ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সমস্যা রয়েছে
- বিবাহ বিচ্ছেদ অথবা স্ত্রী মারা গেছেন এমন ব্যক্তি
- অর্থনৈতিক সমস্যা
- পারিবারিক কলহ
- নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি ইত্যাদি
মানসিক চাপ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ যা অতিক্রম করা যায় না। তবে মানসিক চাপকে এমন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যেন তা জীবন যাপনের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যার সৃষ্টি না করে। এই ব্যাপারে প্রয়োজনে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট এর পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।
Leave a Reply