বাদামী চালের পুষ্টিগুণ

বাদামী চালের পুষ্টিগুণ: ৫টি সহজ রেসিপি (বাদামী চালের ভাত কি বাচ্চাদের জন্য উপকারী?)

অনেকেই হয়তো শুনেছেন যে বাদামী চালে (Brown Rice) তুলনামূলক বেশি উপকারিতা রয়েছে। তবে আপনার শিশুর জন্য বাদামী চাল কতটা উপকারী হতে পারে এবং তা কোন বয়স থেকে খাওয়ানো যাবে সেই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। কারণ বাদামী চাল কখনো কখনো আপনার শিশুর জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে

আর তাই এই অনুচ্ছেদে বাদামী চাল সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ তথ্য এবং বাচ্চাদের জন্য খাওয়ানোর নির্দেশনা সমূহ তুলে ধরা হয়েছে। সেই সাথে অনুচ্ছেদের শেষের দিকে রয়েছে সহজ ও স্বাস্থ্যকর উপায়ে তৈরি বাদামী চালের কয়েকটি রেসিপি।

বাদামী চালের পুষ্টিগুণ

এক কাপ (প্রায় ১৯৫ গ্রাম পরিমাণ) বাদামী চালের ভাত থেকে কোন পুষ্টি উপাদান কতটুকু মাত্রায় পাওয়া যেতে পারে তা নিচে ছকের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো: 

পুষ্টি উপাদান পরিমাণ
শক্তি  ২১৬ ক্যালরি
কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা  ৪৪.৮ গ্রাম
ফাইবার বা‌ আঁশ  ৩.৫ গ্রাম
সুগার বা চিনি  ০.৭ গ্রাম
প্রোটিন বা আমিষ  ৫.০ গ্রাম
ফ্যাট বা‌ চর্বি  ১.৮ গ্রাম
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড  ২৭.৪ মিলিগ্রাম
ওমেগা সিক্স ফ্যাটি এসিড  ৬০৩ মিলিগ্রাম
পানি ১৪৩ গ্রাম

 

ভিটামিন (Vitamins) পরিমাণ
ভিটামিন এ  নেই
ভিটামিন সি  নেই
ভিটামিন ডি  নেই
ভিটামিন ই  ০.১ মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে  ১.২ মাইক্রোগ্রাম
থায়ামিন (ভিটামিন বি১)  ০.২ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লেভিন (ভিটামিন বি২)  ০.১৯ মিলিগ্রাম
নিয়াসিন (ভিটামিন বি৩)  ৩.০ মিলিগ্রাম
পাইরিডক্সিন (ভিটামিন বি৬)  ০.৩ মিলিগ্রাম
ফোলেট (ভিটামিন বি৯)  ৭.৮ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন বি৫  ০.৬ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি১২  নেই
*Choline  ১৭.৯ মিলিগ্রাম
*Betaine  ১.০ মিলিগ্রাম

 

(মাইক্রোগ্রাম (Microgram) হলো এমন একটি একক যা খুবই কম পরিমাণ বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। ১ মিলিগ্রামের ১ হাজার ভাগের ১ ভাগকে ১ মাইক্রোগ্রাম বলা হয়।)

*Choline এবং Betaine উপাদান দুইটি ভিটামিন নয় তবে ‌শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। অর্থাৎ শরীরের নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলীতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যেমন: Choline কোষের আবরণ‌ তৈরি এবং স্নায়ুতন্ত্রের কাজে সহায়তা করে। অন্যদিকে Betaine রক্তনালী এবং লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্রমে অবদান রাখে।

খনিজ উপাদান  পরিমাণ
ক্যালসিয়াম (Ca)  ১৯.৫ মিলিগ্রাম
আয়রন বা লৌহ (Fe)  ০.৮ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম (Mg)  ৮৩.৯ মিলিগ্রাম
ফসফরাস (P)  ১৬২ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম (K)  ৮৩.৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম (Na)  ৯.৮ মিলিগ্রাম
জিংক (Zn)  ১.২ মিলিগ্রাম
কপার (Cu)  ০.২ মিলিগ্রাম
ম্যাঙ্গানিজ (Mn)  ১.৮ মিলিগ্রাম
সেলেনিয়াম (Se)  ১৯.১ মাইক্রোগ্রাম

 

এক কাপ বাদামী চালের ভাত থেকে যে পরিমাণ ম্যাঙ্গানিজ পাওয়া যায় তাতে দৈনিক চাহিদার ৮৮ শতাংশ পর্যন্ত পূরণ হয়ে যায়। আর এই উপাদানটি শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ যেমন হাড়ের গঠন, স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রম, ক্ষত শুকানো, রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, মাংসপেশীর সংকোচন, শুক্রাণু উৎপাদন ইত্যাদিতে সহায়তা করে থাকে। অতি অল্প পরিমাণে প্রয়োজন হওয়া এই উপাদানটির ঘাটতি হলে শরীরের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার সক্ষমতা (Fertility) কমে যায়।

ব্রাউন রাইসের পুষ্টি সম্পর্কিত তথ্য (গবেষণালব্ধ)

গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা নিয়মিত ব্রাউন রাইস বা বাদামী চালের ভাত খেয়ে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৩২ শতাংশ পর্যন্ত কম থাকে। বাদামী চালের ভাত হলো Low glycemic index সমৃদ্ধ খাবার যার অর্থ হচ্ছে খাওয়ার পর রক্তে শর্করার পরিমাণ খুবই ধীর গতিতে বাড়তে থাকে। পক্ষান্তরে যে সমস্ত খাবার High glycemic index সমৃদ্ধ সেগুলো খাওয়ার পর দ্রুত গতিতে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়তে থাকে যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অগ্ন্যাশয় (Pancreas) থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় ইনসুলিন নিঃসরণের প্রয়োজন পড়ে। High glycemic index সমৃদ্ধ খাবার বলতে পরিশোধিত শর্করা কে বোঝানো হয়ে থাকে। যেমন: চিনি, মিষ্টি জাতীয় খাবার, সাদা ভাত, ময়দা, কেক, চিপস, কলা, আম, খেজুর, তরমুজ ইত্যাদি।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথ (NIH of US) এর তথ্য অনুযায়ী বাদামী চালের ভাত খাওয়ার মাধ্যমে হার্টের রোগের ঝুঁকি ২১ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায় কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার বা আঁশ। এছাড়াও বাদামী চালে lignans নামক এমন একটি উপাদান রয়েছে যা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। বাদামী চালের ভাত থেকে যে পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায় তা হার্ট ভালো রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে বাদামী চালে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম ২২ শতাংশ পর্যন্ত স্ট্রোক (Stroke) এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি  কমাতে পারে।

শিশুদের জন্য ব্রাউন রাইসের স্বাস্থ্য উপকারিতা

ব্রাউন রাইস বা বাদামী চালের ভাত হার্টের রোগ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত এই রোগগুলো তেমন হতে দেখা যায় না। তাহলে কি শিশুদের জন্য বাদামী চালের ভাত কোনো বিশেষ উপকারিতা বয়ে আনতে পারে না? পারে, তো চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে?

এন্টি-অক্সিডেন্ট বিদ্যমান

বাদামী চালের মধ্যে এন্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা শিশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সহজেই ইনফেকশন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও এতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান গুলো (ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম ইত্যাদি) শিশুর শরীর এবং মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে।

কোষ্টকাঠিন্য (Constipation) দূর করে

বাদামী চালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ রয়েছে যা কোষ্টকাঠিন্য (Constipation) দূর করে। প্রচুর আঁশ থাকার দরুন বাদামী চালের ভাত ধীরে ধীরে হজম হয় যার ফলে শিশুর পেটে সহজেই ক্ষুধা লাগার অনুভূতি তৈরি হয় না। এবং পেট ভরা থাকার দরুন শিশু থাকে শান্তশিষ্ট এবং হাসিখুশি।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে

অনেক বাচ্চাদের ক্ষেত্রে শিশু বয়সেই অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পেতে দেখা যায় যা নানাবিধ রোগের সূচনা করে। নিয়মিত বাদামী চালের ভাত বা অন্যান্য রেসিপি খাওয়ানোর অভ্যাস করলে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। শুধু বাচ্চাদের ক্ষেত্রেই নয়,‌ বরং বড়দের জন্যও শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে বাদামী চাল। ৪০ জন স্থূল (Obese) মহিলার উপর একটি গবেষণা করে দেখা গেছে যে দৈনিক ১৫০ গ্রাম পরিমাণ বাদামী চালের ভাত ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত খাওয়ার ফলে তাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে।

কখন বাচ্চার জন্য বাদামী চালের ভাত শুরু করা উচিত?

বাদামী চালের ভাত শিশুর জন্য উপকারী হতে পারে এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই তবে তা কোন বয়স থেকে শুরু করা উচিত? এই ব্যাপারে একজন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞের (Pediatrician) পরামর্শ গ্রহণ করা সবচেয়ে ভালো হবে। কারণ আপনার শিশুটি যেমন অন্য দশটি শিশুর তুলনায় আলাদা তেমনি ভাবে তার খাবার নির্দেশনাও ভিন্ন হতে পারে। তবে সার্বিক ভাবে কিছু নিয়ম নির্দেশনা রয়েছে যে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।

৬ মাস পর্যন্ত বাচ্চাদের জন্য শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উত্তম। কোনো কারণ বশত মায়ের বুকে পর্যাপ্ত দুধ না‌ থাকলে সেক্ষেত্রে কৌটাজাত দুধ বা গরুর দুধ খাওয়ানো যেতে পারে তবে তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী। ৬ মাসের পর থেকে শক্ত খাবার দেওয়া যাবে। তার আগে শক্ত খাবার দেওয়া উচিত নয় কারণ তখন ছোট্ট শিশুদের মুখগহ্বর ও জিহ্বা দুধ ব্যতীত অন্য খাবার গ্রহণ করতে সক্ষম হয় না। নূন্যতম একটি বয়স পর্যন্ত (৪ মাস) শিশুর জিহ্বা শক্ত খাবার শুধুমাত্র বাইরের দিকে ঠেলতে থাক। তবে বাচ্চা ভেদে এই বয়সের ক্ষেত্রে তারতম্য হতে পারে। আপনার বাচ্চাটি এখনি শক্ত খাবার খেতে পারবে কিনা তা তার আচরণ দেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পারেন। যেমন: শিশু যদি কোনো খাবার মুখে নিয়ে চিবাতে শুরু করে তাহলে বুঝতে হবে যে শিশুটিকে আস্তে আস্তে শক্ত খাবার দেওয়া যেতে পারে।

শক্ত খাবার দেওয়া যেতে পারে বলেই শুরুতেই বাদামী চালের ভাত দেওয়া উচিত হবে না বলে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশান (FDA) এর নির্দেশনা রয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে বাদামী চালে সামান্য পরিমাণে আর্সেনিক (Arsenic) থাকে আর আর্সেনিক হলো একধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে বিশেষত শিশুদের জন্য অবশ্যই তা পরিত্যাগ করা জরুরি। বাদামী চালের উপরিভাগে একটি আস্তরণ (Bran) থাকে যার ফলে এতে আর্সেনিক থাকার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। পক্ষান্তরে সাদা ভাতের চালের উপরিভাগের আস্তরণ ছাড়িয়ে ফেলা হয় বলে এতে আর্সেনিক এর পরিমাণ কম থাকে।

আর্সেনিকের বিষয়টি বিবেচনায় শিশুর বয়স ঠিক ৬ মাস হলেই বাদামী চালের ভাত না দিয়ে বরং সাদা ভাত দেওয়া ভালো। তবে পরবর্তীতে (১ অথবা ২ বছর বয়স থেকে) বাদামী চালের ভাত দেওয়া যেতে পারে। বাদামী চালে বিদ্যমান আর্সেনিক দূর করার জন্য FDA এর নির্দেশনা হলো বেশি পরিমাণে (১:৬ অনুপাত) পানি দিয়ে ভাত রান্না করতে হবে এবং চাল ফুটলে তখন অতিরিক্ত পানি ফেলে দিতে হবে। যদিও এই পদ্ধতিতে আর্সেনিক দূর করার পাশাপাশি পানির সাথে কিছু পরিমাণে চালের পুষ্টিগুণ কমে যেতে পারে।

টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক থাকতে পারে কিন্তু চালের মধ্যে আর্সেনিক আসবে কিভাবে সেই ব্যাপারে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে। প্রকৃতপক্ষে আর্সেনিক উপাদান টি পানি, মাটি ও বায়ুতে থাকতে পারে। আমাদের দেশে ধানগাছ যে মাটিতে হয় এবং তাতে যে পানি সেচ দেওয়া হয় তার মাধ্যমে ধান তথা চালে আর্সেনিক চলে আসে।

বাদামী চালের ভাত বাচ্চাদের জন্য কখন ঝুঁকিপূর্ণ?

আর্সেনিকের বিষয়টি ছাড়াও বাদামী চালের ভাত কখনো কখনো বাচ্চাদের জন্য উপকারী না হয়ে বরং ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেমন: যে সমস্ত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জন্মগত কিডনির রোগ অথবা জন্মের পর কিডনিতে কোনো সমস্যা ধরা পড়ে তাদের ক্ষেত্রে বাদামী চালের ভাত পরিহার করা উচিত। কারণ বাদামী চালে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে যা কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।

এছাড়াও আরো কিছু রোগ রয়েছে যে ক্ষেত্রে চিকিৎসকগণ অধিক পরিমাণে ফাইবার রয়েছে এমন খাবার খেতে নিষেধ করে থাকেন। কারণ তাতে হজমের ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। যেমন:

  • ডায়রিয়া
  • Diverticulitis
  • Inflammatory bowel disease
  • Colorectal cancer
  • পরিপাকতন্ত্রের সার্জারি ইত্যাদি

যে সমস্ত বাচ্চাদের শরীরের ওজন কম তাদের জন্য বেশি আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ না করাই ভালো। কারণ তাতে শরীর বেশি ক্যালরি পাবে না কিন্তু পেট ভরা মনে হবে। আর তাই এমন শিশুদের জন্য বেশি আঁশযুক্ত খাবার না দিয়ে বরং উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার অর্থাৎ ভালো মানের প্রোটিন, ফ্যাট ইত্যাদি সরবরাহ করা উচিত।

এলার্জি এবং বাদামী চাল

বাদামী চালের ক্ষেত্রে এলার্জি (Allergies) হওয়া বিষয়টি সচরাচর ঘটতে দেখা যায় না। তবে এলার্জি (Food allergy) যেহেতু একেক ব্যক্তির জন্য একেক খাবার থেকে হতে পারে আর তাই আপনার শিশুর বেলায় বাদামী চালের ভাত থেকে এলার্জি হওয়া একদম অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। বাদামী চালের ভাত খায়ানোর পর যদি নিম্নলিখিত লক্ষণ গুলো দেখতে পাওয়া যায় তবে সেক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব একজন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। লক্ষণসমূহ হলোঃ

  • চুলকানি (Itchy rash)
  • ত্বকের উপরিভাগে লাল চাকা
  • শ্বাসকষ্ট
  • বমি (Vomiting)
  • ডায়রিয়া ইত্যাদি

উল্লেখ্য বাদামী চালকে গ্লুটেন ফ্রি (Gluten-Free) বলা হয় কারণ প্রাকৃতিক ভাবে এর মধ্যে কোনো গ্লুটেন থাকে না। আর গ্লুটেন হলো এমন একধরনের প্রোটিন জাতীয় উপাদান যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। অধিকাংশ মানুষের বেলায় গ্লুটেন এলার্জি বা ইনটলারেন্সি হয়ে থাকে যার লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় বুক জ্বালা, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, বমি ইত্যাদি।

বাদামী চালের ভাত নাকি সাদা ভাত?

কোনটি ভালো সাদা ভাত নাকি বাদামী চালের ভাত তা নির্ণয় করতে হলে এই দুইয়ের মধ্যেকার পার্থক্য জানা জরুরি। পুষ্টিগুণ বিবেচনায় সাদা ভাত আর বাদামী চালের ভাতের মধ্যে ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট ইত্যাদি প্রায় সমপরিমাণে রয়েছে। তবে সাদা ভাতে তুলনামূলক কম রয়েছে ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাঙ্গানিজ আর বেশি পরিমাণে আয়রন ও ফলেট রয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা প্রতিদিন সাদা ভাতের পরিবর্তে ৫০ গ্রাম পরিমাণ বাদামী চালের ভাত খেয়ে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১৬ শতাংশ পর্যন্ত কম হয়ে থাকে। জাপানে একদল মানুষের উপর চালানো একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা নিয়মিত সাদা ভাত খেয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে শরীরের ওজন বেড়ে গেছে। পক্ষান্তরে যারা বাদামী চালের ভাত খেয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই গবেষণার দ্বারা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে বাদামী চাল ওজন নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

এই পর্যায়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে যে এতো এতো উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও সাদা ভাতের তুলনায় বাদামী চালের ভাত কম প্রচলিত কেন? এর কয়েকটি কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো।

  • বাদামী চালের ভাত খেতে খুব বেশি সুস্বাদু নয়
  • চিবানোর সময় কিছুটা শক্ত মনে হয়
  • রান্না করতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগে
  • আর্সেনিক থাকে ইত্যাদি

এছাড়াও বাদামী চালের ভাতে ফাইটেট‌ (Phytic Acid) নামক একটি উপাদান রয়েছে যা পেটের মধ্যে গিয়ে আয়রন, জিংক এবং ক্যালসিয়াম এর সাথে বন্ধন গঠন করে। ফাইটেট বা গঠিত বন্ধনের ফলে সৃষ্ট যৌগ শরীর শোষণ করতে পারে না। ফলে শরীরে আয়রন, জিংক এবং ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি হতে পারে। আর এই সমস্ত উপাদান গুলো যে শরীরের জন্য অনেক উপকারী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর তাই দীর্ঘদিন ধরে একটানা ফাইটেট সমৃদ্ধ বাদামী চালের ভাত খাওয়া সমীচিন হবে না।

তবে কিছু কিছু রোগের জন্য মাঝে মধ্যে সাদা ভাতের পরিবর্তে বাদামী চালের ভাত খাওয়া বেশ উপকারী হতে পারে। যেমন:

  • অতিরিক্ত ওজন
  • টাইপ-২ ডায়াবেটিস
  • কোলেস্টরল
  • উচ্চ রক্তচাপ
  • স্ট্রোকের ঝুঁকি
  • হার্টের রোগ
  • কোষ্টকাঠিন্য ইত্যাদি

ভালো মানের বাদামী চাল চেনার উপায়

আগেকার দিনে ঢেঁকিতে ধান ছাঁটার মাধ্যমে চাল বানানো হতো আর এই প্রক্রিয়ায় চালের উপরিভাগের আস্তরণ (Bran) ঠিক থাকতো। ঢেঁকি ছাঁটা চাল হলো সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের বাদামী চাল তবে পরিতাপের বিষয় হলো বর্তমান সময়ে ঢেঁকি এবং ঢেঁকি ছাঁটা চাল দুটোই খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে বাজারে বাদামী চাল কিনতে পাওয়া যায় যা রং দেখে সহজেই বোঝা যাবে এটি সাদা ভাতের চাল নয়।

অনেক অসাধু ব্যবসায়ী আবার চালে রং মিশিয়ে বাদামী চাল বলে বিক্রি করে থাকেন এবং এমন ঘটনা আমাদের দেশে অহরহ ঘটতে দেখা গেছে। আপনি যে চাল কিনতে গিয়েছেন তাতে রং মেশানো কিনা তা বুঝতে হলে হাতের তালুতে নিয়ে ঘসতে থাকুন। অথবা পানিতে নিয়ে ঘসে ধোয়ার পর তা থেকে আলাদা রং উঠে কিনা পরীক্ষা করুন। যদি কোনো রং না উঠে তবে সেটি ভালো চাল বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। সবচেয়ে নিরাপদ হলো ভালো ব্র্যান্ড দেখে বা সুপার শপ থেকে চাল কেনা।

ছোট শিশুদের জন্য ব্রাউন রাইস রান্না করার সবচেয়ে ভাল উপায়

ব্রাউন রাইস বা বাদামী চালের ভাত খেতে কিছুটা শক্ত এবং তুলনামূলক কম সুস্বাদু আর তাই ছোট শিশু বাচ্চারা এটি খেতে পছন্দ নাও করতে পারে। কিন্তু আপনি যদি আপনার বাচ্চার শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান গুলো বাদামী চাল থেকে পেতে চান সেক্ষেত্রে একটি ভালো উপায় হতে পারে চাল গুঁড়া করে গরুর দুধ অথবা কৌটাজাত দুধের সাথে মিশিয়ে  ঘন তরলের মতো রান্না করা। অতঃপর রান্না করা তরল জাতীয় খাবার টি বাটিতে নিয়ে চামচে করে খাওয়ানো যেতে পারে। অথবা ফিডারে ভরে শিশুর হাতে তুলে দিলে স্বাচ্ছন্দ্যে খেতে থাকবে। তবে ফিডারে খাওয়ানোর ব্যাপারে কয়েকটি বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। যেমন:

  • প্লাস্টিকের ফিডারের চেয়ে কাঁচের তৈরি ফিডার বেশি স্বাস্থ্যসম্মত
  • ফিডার ব্যবহারের পূর্বে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে
  • ফিডারের একটি নিপল দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা যাবে না ইত্যাদি

বাদামী চালের গুঁড়া আর দুধ দিয়ে তৈরি এমন খাবার সব বাচ্চার কাছে সুস্বাদু নাও লাগতে পারে। আবার সবার স্বাস্থ্যের জন্য তা উপকারী ভূমিকা রাখতে পারবে এমনটিও নয়। আর তাই আপনার বাচ্চাকে এই জাতীয় খাবার দেওয়ার আগে একজন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করতে পারেন। তবে সাধারণত বাচ্চাদের পেটে গ্যাস জমা, ঢেঁকুর উঠা, বমি ইত্যাদি দূর করতে এই খাবারটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

বাচ্চাদের জন্য বাদামী চাল রান্নার উপায়

একদম ছোট শিশুদের তুলনায় যারা বড় এমন বাচ্চাদের জন্য সহজ রেসিপি হতে পারে বাদামী চালের ভাত যা যে কোনো ধরনের তরকারি, সবজি, মাছ, মাংস অথবা ডিম দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে প্রতি বেলার খাবারে বাদামী চালের ভাত না দিয়ে বরং মাঝে মধ্যে দিতে হবে। তাহলে খাবার টা একঘেয়েমি লাগবে না বরং মজার সাথে খাওয়া যাবে।

সাধারণ ভাবে ভাত রান্না করার প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমেই বাদামী চালের ভাত রান্না করা যায়। তবে এক্ষেত্রে তুলনামূলক একটু বেশি সময় লাগে। রান্না করার আগে অবশ্যই ভালো ভাবে চাল ধুয়ে নিতে হবে। আর পানি চালের তুলনায় দ্বিগুণ দিয়ে রান্না করা যাবে। তবে ছয় গুণ (১:৬ অনুপাতে) দিলে সেক্ষেত্রে আর্সেনিক থাকলে তা দূর হয়ে যাবে বলে মনে করা হয়।

ব্রাউন রাইসের সহজ এবং স্বাস্থ্যকর শিশুর –খাদ্য রন্ধন প্রণালী

ভাত একটি কমন খাবার আর তাই ব্রাউন রাইস দিয়ে অন্য কোনো বৈচিত্র্যময় খাবার তৈরি করতে পারলে তা সবার কাছেই পছন্দনীয় হতে পারে এবং সেই সাথে রান্নার রেসিপি ভালো হলে তা খেতেও সুস্বাদু হবে। এছাড়াও চালের সাথে অন্য কোনো উপাদান মেশানোর ফলে পুষ্টিগুণ অনেক বেড়ে যাবে। তো চলুন বাদামী চালের স্বাস্থ্যকর ও সহজ পাঁচটি রেসিপি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

১. বাদামী চালের সহজ রেসিপি (ব্রাউন রাইস খিচুড়ি)

ছোটদের জন্য খিচুড়ি একটি পছন্দনীয় খাবার এবং সেই সাথে পুষ্টিকরও বটে। খিচুড়িতে বিভিন্ন সবজি,‌ ডিম অথবা মাংস মিশিয়ে তার পুষ্টিগুণ যেমন বাড়ানো যায় তেমনি তা খেতেও মজা লাগে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ: বাদামী চাল, ডাল বা মটরশুঁটি, মশলা, তেল, লবণ, পানি, সবজি

প্রক্রিয়া:

  • প্রথমে চাল ও ডাল ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। যে সমস্ত সবজি দিবেন সেগুলো আগে ধুয়ে পরে কাটতে হবে। মনে রাখবেন কাঁটার পর সবজি ধোয়া যাবে না
  • প্রয়োজনীয় মশলা যেমন পেঁয়াজ, মরিচ, লবণ, আদা, রসুন, দারচিনি, লবঙ্গ, তেল ইত্যাদি যোগ করুন
  • পরিমাণ মতো পানি দিন।‌ খিচুড়ি বেশি পাতলা করতে চাইলে সেক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি পানি যোগ করতে হবে
  • পাতিলে নিয়ে চুলায় রান্না করুন অথবা প্রেসার কুকার ব্যবহার করতে পারেন
  • গরম গরম পরিবেশন করুন। এই সময় সালাদ হিসেবে টমেটো, শসা, গাজর অথবা লেবু দিতে পারেন

২. ব্রাউন রাইসের ঘন ব্রথ বা স্যুপ

বর্তমান সময়ে স্যুপ একটি জনপ্রিয় খাবার হয়ে উঠেছে যা সন্ধ্যাবেলার নাস্তা হিসেবে বাচ্চারা খেতে বেশ পছন্দ করে। তো চলুন বাদামী চাল দিয়ে কিভাবে স্যুপ তৈরি করা যায় তা নিয়ে কথা বলা যাক।

প্রয়োজনীয় উপকরণ: বাদামী চাল, টমেটো, মুরগির মাংস (ছোট ছোট করে কাঁটা), মশলা, তেল, লবণ, পানি

প্রক্রিয়া:

  • চাল ধুয়ে তাতে মাংস, টমেটো কুচি, মশলা এবং পরিমাণ মতো পানি যোগ করতে হবে
  • ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা পরিমাণ সময় রান্না করতে হবে
  • এর মাঝে ২ থেকে ৩ বার নাড়তে হবে
  • ঘন স্যুপের মতো হয়ে গেলে পরিবেশন করুন
  • কিছু অংশ বাটিতে ভরে ফ্রিজে রাখতে পারেন যা পরবর্তীতে মাইক্রোওভেনে গরম করে দ্রুত সময়ে পরিবেশন করতে পারবেন

৩. ব্রাউন রাইস–কুমড়োর পোরিজ বা জাউ

আগেকার সময়ে জাউ বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার ছিলো কিন্তু বর্তমানে এই খাবারটির প্রচলন বেশ কম। তবে হঠাৎ করে একদিন রান্না করলে বৈচিত্র্যময় একটি খাবার হিসেবে জাউ খেতে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগতে পারে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ: বাদামী চাল, বিচি ছাড়া কুমড়ো, লবণ, পানি

প্রক্রিয়া:

  • চাল ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে এবং কুমড়ো কুচি কুচি কেটে নিন
  • এক্ষেত্রে কোনো মশলা এবং তেল ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না
  • পরিমাণ মতো পানি ও লবণ যোগ করে রান্না শুরু করুন
  • চাল সিদ্ধ হতে যতক্ষণ লাগে ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন
  • রান্না শেষের দিকে আস্তে আস্তে তাপ‌ দিতে হবে। অন্যথায় পানি শুকিয়ে পাতিলের নিচের অংশে পুড়ে যেতে পারে

৪. ব্রাউন রাইস এবং ফলের পুডিং

যদিও পুডিং বেশির ভাগ সময়েই দুধ দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে তবে ফল বা ফলের রস দিয়েও তৈরি করা যেতে পারে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ: বাদামী চাল, ফলের রস, কলা, লবণ

প্রক্রিয়া:

  • প্রথমত বাদামী চাল দিয়ে নরম প্রকৃতির ভাত রান্না করুন
  • অতঃপর ভাত, ফলের রস ও বিভিন্ন ফল কেটে টুকরো করে একসাথে মিশিয়ে নিন
  • প্রয়োজন মতো লবণ মিশিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করুন
  • তরল শুকিয়ে গেলেই হয়ে গেলো বাদামী চাল এবং ফলের পুডিং

৫. ব্রাউন রাইস ফিশ ক্যাসারল ক্যাসারল (casserole) আমাদের দেশের জন্য একটি নতুন ধরনের খাবার আর তাই ভালো ভাবে তৈরি করতে পারলে আপনার শিশুটি অনেক মজার সাথে উপভোগ করতে পারবে খাবারটি। ব্রাউন রাইস ফিস ক্যাসারল বেশ পুষ্টিকর একটি খাবার কারণ এতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ মাছ যা বাচ্চাদের জন্য খুবই উপকারী।

প্রয়োজনীয় উপকরণ: বাদামী চাল, ছোট মাছ অথবা বড় মাছ (কাটা ছাড়ানো), দই, পানি, লবণ

প্রক্রিয়া:

  • প্রথমেই চাল ধুয়ে সিদ্ধ করে নিন
  • অতঃপর ভাত, মাছ, দই এবং পরিমাণ মতো লবণ মিশিয়ে নিন
  • মিশ্রণটি একটি পাত্রে নিয়ে ওভেনে রেখে দিন
  • কেক তৈরির মতো পদ্ধতিতে বেকিং হয়ে গেলে গরম গরম পরিবেশন করুন

বাদামী চাল দিয়ে যে কোনো রেসিপি তৈরি করে খাওয়া হোক না কেন তাতে এর পুষ্টিগুণ কমে না বরং সব রকমের পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। তবে সাদা ভাতের মতো প্রত্যেকদিন বাদামী চালের ভাত না খেয়ে বরং মাঝে মধ্যে খেতে থাকুন এবং বাচ্চাদের খাওয়ান। এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত তথ্যের জন্য একজন পুষ্টিবিদ (Dietitian) এর পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।‌