বীর্য হলুদ হওয়ার কারণ কি

বীর্য হলুদ হওয়ার কারণ কি?

বীর্যপাতের সময়ের ব্যাপারটি নিয়ে অধিকাংশ পুরুষ অনেক বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন কিন্তু বীর্যের রঙ (Semen Color) কেমন হলো সেই বিষয়ে কখনো ভেবে দেখা হয় না। অথচ বীর্যের রঙ পরিবর্তনের সাথে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং বেশ কিছু রোগের যোগসূত্র রয়েছে। সাধারণত সাদা অথবা সাদাটে ধূসর (Whitish gray) রঙের বীর্য সুস্থ যৌন স্বাস্থ্যকে নির্দেশ করে। কিন্তু বীর্যের রঙ যদি সাদা না হয়ে হলুদ বা হালকা হলুদাভ হয় তবে আপনাকে কি ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে জানেন কি?

এই অনুচ্ছেদে আমরা বীর্যের রঙ হলুদ হওয়ার কারণ নিয়ে কথা বলবো। অতঃপর কি কি লক্ষণ দেখা দিলে অথবা কত সময় পরে অবশ্যই একজন যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত সেই বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা করবো। সেই সাথে বীর্য হলুদ হলে কি ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে তা জানতে অনুচ্ছেদটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

হলুদ বীর্য হওয়ার লক্ষণ কি?

হলুদ বীর্য হওয়ার লক্ষণ কি তা জানার পূর্বে বীর্য উৎপাদন ও তার কার্যক্রম সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক। প্রত্যেক সুস্থ পুরুষের ক্ষেত্রে অন্ডকোষের মধ্যে শুক্রাণু (sperm) তৈরি হয় যা যৌন মিলনের মাধ্যমে নারীর শরীরে প্রবেশ করে এবং ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়ে ভ্রূণ গঠন করতে পারে। এই প্রক্রিয়া যথাযথ ভাবে সম্পন্ন করার জন্য দীর্ঘসময় ধরে শুক্রাণুকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও প্রতিরক্ষামূলক দায়িত্ব পালন করে বীর্য (Semen) যা পুরুষ প্রজনন তন্ত্রের বিভিন্ন অংশ থেকে নিঃসৃত হয়। যেমনঃ Seminal vesicles, প্রস্টেট গ্রন্থি, Bulbourethral glands ইত্যাদি।

সাধারণত বীর্য দেখতে ঘন জেলির ন্যায় বা ডিমের সাদা অংশের মতো দেখায়। বীর্যের রঙ সাময়িক সময়ের জন্য হলুদ হতে পারে আবার অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘসময় পর্যন্ত এই লক্ষণটি থেকে যায়। হলুদ বীর্যের সাথে আরো কিছু আনুষাঙ্গিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমনঃ

  • জ্বর (Fever)
  • বীর্যপাতের সময় ব্যথা বোধ
  • প্রস্রাব অথবা বীর্যের সাথে রক্ত
  • যৌন মিলনে সমস্যা ইত্যাদি

বীর্য হলুদ হওয়ার কারণ কি?

নানাবিধ কারণে বীর্য হলুদ বর্ণের হতে পারে যার মধ্যে কোন কোনটি তেমন গুরুতর নয়। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে অনেক জটিল প্রকৃতির রোগের কারণেও বীর্য হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। এছাড়াও Cleveland Clinic এর তথ্য অনুযায়ী বীর্য হলুদ হওয়ার পেছনে কতিপয় রিস্ক ফ্যাক্টর রয়েছে। যেমনঃ

বয়স: বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বীর্যের রঙ কিছুটা পরিবর্তন হয়ে থাকে। সাধারণত বয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে বীর্যের রঙ হালকা হলুদ বর্ণের দেখায় তবে এটিকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়।

খাবার: কতিপয় খাবার রয়েছে যা বেশি পরিমাণে খাওয়া হলে বীর্য হলুদ বর্ণের হতে পারে। যেমনঃ রসুন, পিঁয়াজ, হলুদ, শতমূলী (asparagus) ইত্যাদি‌।

বীর্যপাত: যারা তুলনামূলক কম সহবাস তথা বীর্যপাত করে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের জমানো শুক্রাণুর উপস্থিতি বীর্যকে হলুদ বর্ণের করে ফেলে।

ধুমপান: ধুমপান করেন এমন পুরুষদের ক্ষেত্রে বীর্যের রঙ হলুদ হওয়ার অধিক সম্ভাবনা রয়েছে।

ওষুধ: কতিপয় ওষুধ যেমন এন্টি বায়োটিক, ভিটামিন বি সহ অন্যান্য আরো কিছু ওষুধ সেবনের ফলে বীর্য হলুদ বর্ণের হতে পারে।

চলুন এই পর্যায়ে ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে বীর্য হলুদ হওয়ার প্রত্যেকটি কারণ এবং তার সমাধান সম্পর্কে জানা যাক।

১. বীর্যে প্রস্রাবের উপস্থিতি

পুরুষের ক্ষেত্রে বীর্য ও প্রস্রাব একই নালী দিয়ে বের হয় যাকে Urethra বা মূত্রনালী বলা হয়। সাধারণত এই নালীর দৈর্ঘ্য ১৮ থেকে ২০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। প্রস্রাব করার পর সামান্য পরিমাণে প্রস্রাব Urethra এর মধ্যে আটকে থাকলে তার পরবর্তী বীর্যপাতের সময় বীর্যের রঙ কিছুটা হলুদ বর্ণের দেখায়। কারণ এক্ষেত্রে বীর্যের সাথে মূত্রনালীতে থাকা প্রস্রাব মিলে যায়। মূত্রনালীতে প্রস্রাব আটকে যাওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমনঃ

  • প্রস্রাবে ইনফেকশন (UTIs- Urinary tract infection)
  • প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া (BPH- Benign prostatic hyperplasia)
  • তলপেটের মাংসপেশীর দুর্বলতা
  • সরু (narrow) মূত্রনালী ইত্যাদি

প্রাথমিক ভাবে মূত্রনালীতে প্রস্রাব আটকে থাকা সমস্যা সমাধানের জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করতে পারেন। তবে এতেও সমস্যার সমাধান না হলে সেক্ষেত্রে যথাযথ কারণ নির্ণয় করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

✓ সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে দুই হাত হাঁটুর উপর রেখে বসে প্রস্রাব করুন। এই পদ্ধতিতে ভালোভাবে প্রস্রাব নিঃসরণ হয়।

✓ প্রস্রাব করার সময় তাড়াহুড়ো করা যাবে না। বরং প্রস্রাব শেষ হওয়ার পর ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড বসে থাকুন।

✓ যাদের ক্ষেত্রে PVR (post void residual) এর সমস্যা রয়েছে অর্থাৎ প্রস্রাব করার পরেও সামান্য পরিমাণে প্রস্রাব মূত্রথলিতে থেকে যায় তাদের জন্য একবার প্রস্রাব করার কিছুক্ষণ পর আবার প্রস্রাব করতে হবে। কারণ মূত্রথলিতে আটকে থাকা প্রস্রাব যেমন প্রস্রাবের ইনফেকশন সৃষ্টি করে তেমনি ভাবে তা মূত্রনালীতে চলে এসে বীর্যের সাথে মিশে হলুদ বীর্য তৈরি করতে পারে।

✓ তলপেটের মাংসপেশীর কার্যক্ষমতা বাড়াতে পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ করতে হবে। যেমনঃ কেগেল ব্যায়াম (Kegel exercises)

২. জন্ডিস

জন্ডিস (Jaundice) হলে মানুষের হাত, পা, মুখমণ্ডল, চোখ সহ সারা শরীর হলুদ বর্ণের হয়ে যায়। সেই সাথে জন্ডিসে আক্রান্ত পুরুষের ক্ষেত্রে প্রস্রাব এবং বীর্যের রঙ হলুদ বর্ণের হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে লোহিত রক্ত কণিকা ভেঙে বিলিরুবিন (Bilirubin) নামক একটি পদার্থ তৈরি হয় যা পরবর্তীতে লিভারের মাধ্যমে দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু কোনো কারণ বশত এই প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায় যাকে মেডিকেলের ভাষায় জন্ডিস বলে। জন্ডিসের কারণ গুলো হলোঃ

  • লিভারের প্রদাহ
  • পিত্তথলিতে পাথর
  • মদ্যপানের অভ্যাস
  • লিভার সিরোসিস
  • অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ (Pancreatitis)

বীর্যের রঙ হলুদ হওয়ার কারণ জন্ডিস কিনা তা বুঝতে একটি সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে জন্ডিস নির্ণয় করা যায় যাকে Serum bilirubin বা S. bilirubin টেস্ট বলা হয়। পরীক্ষায় জন্ডিস ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে এবং সেই সাথে বিশ্রামে থাকা জরুরি। মনে রাখবেন জন্ডিসের চিকিৎসায় কখনোই কোনো কবিরাজ বা হেকিমের শরণাপন্ন হওয়া যাবে না।

৩. Leukocytospermia

Leukocytospermia একটি মেডিকেল টার্ম যা দ্বারা বোঝানো হয় বীর্যের মধ্যে অতিরিক্ত পরিমাণে Leukocyte বা শ্বেত রক্ত কণিকার উপস্থিতি। এটিকে pyospermia ও বলা হয়ে থাকে যা একটি জটিল প্রকৃতির রোগ। বীর্যের রঙ হলুদ হয়ে যাওয়া এই এই রোগের একটি লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়। এই রোগের জটিলতা হিসেবে বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান কমে যায় যা পুরুষের ইনফারটিলিটি (Infertility) তৈরি করে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে একজন পুরুষ পর্যাপ্ত পরিমাণ ও গুণগত মান সম্পন্ন শুক্রাণুর অভাবে বাচ্চা জন্ম দিতে পারে না। Leukocytospermia এর কারণ হিসেবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমনঃ

  • ইনফেকশন (Infections)
  • যৌন বাহিত রোগ (STDs- sexually transmitted diseases)
  • বিভিন্ন জটিল রোগের কুফল
  • Autoimmune disorders
  • মদ্যপান বা মারিজুয়ানা নেশা গ্রহণ

হলুদ বীর্য Leukocytospermia মতো জটিল রোগের সংকেত বহন করছে কিনা তা নির্ণয় করতে একটি সহজ পরীক্ষা করা যেতে পারে যাকে Semen analysis বলা হয়। পরীক্ষার মাধ্যমে যদি বীর্যে অতিরিক্ত শ্বেত রক্ত কণিকার উপস্থিতি দেখা যায় তবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪. Prostate infection

প্রস্টেট গ্রন্থি (Prostate gland) পুরুষের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা থেকে বীর্য তৈরি হয়। কোনো কারণবশত প্রস্টেট গ্রন্থিতে জীবাণুর সংক্রমণ (Infection) হলে তার লক্ষণ হিসেবে বীর্যের রঙ হলুদ হতে পারে। হলুদ বীর্য যে প্রস্টেট ইনফেকশনকে নির্দেশ করছে তা বুঝতে নিম্নলিখিত লক্ষণাবলী সহায়তা করে। যেমনঃ

  • প্রস্রাবের শুরুতে অথবা প্রস্রাব করার সময় ব্যথা বোধ
  • ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হয়
  • বীর্যপাতের সময় ব্যথা
  • তলপেটে ও পিঠে ব্যথা
  • ঘোলাটে প্রস্রাব ইত্যাদি

উল্লেখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রস্টেট গ্রন্থির ইনফেকশন হওয়ার প্রকৃত কারণ জানা যায়নি তবে প্রস্রাবের ইনফেকশন থেকে জীবাণু প্রস্টেট গ্রন্থিতে ইনফেকশন ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা হয়। যা হোক, প্রস্টেট গ্রন্থির ইনফেকশন প্রতিরোধে কয়েকটি কার্যকরী ব্যবস্থা রয়েছে যা নিম্নরূপঃ

  • ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি
  • দীর্ঘসময় ধরে একটানা বসে থাকলে প্রস্টেট গ্রন্থির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। আর তাই বসে কাজ করেন এমন পুরুষদের জন্য মাঝে মধ্যে উঠে দাঁড়ানো বা একটু হাঁটাহাঁটি করতে হবে
  • নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে
  • প্রচুর পরিমাণে ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন
  • অতিরিক্ত চা ও কফি পানের অভ্যাস সীমিত করতে হবে
  • যে সমস্ত পুরুষ অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকে তাদের ক্ষেত্রে প্রস্টেট গ্রন্থির ইনফেকশন হওয়ার অধিক সম্ভাবনা রয়েছে। আর তাই যতটা সম্ভব মানসিক চাপ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।

৫. অস্বাস্থ্যকর জীবন যাত্রার প্রভাব

অস্বাস্থ্যকর জীবন যাত্রার প্রভাব বিভিন্নভাবে বীর্যের রঙ হলুদ হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেমনঃ

✓ প্রথমত ধুমপান করা অধিকাংশ পুরুষের ক্ষেত্রেই একটি বাজে অভ্যাস হিসেবে দেখা যায় যা বীর্যকে হলুদ বর্ণের করে ফেলে। এছাড়াও ধুমপান ফুসফুস ও হার্টের রোগ সৃষ্টি করা সহ ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা লিঙ্গ উত্থানে সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ। আর তাই একজন সচেতন পুরুষ হিসেবে আপনাকে ধুমপানের অভ্যাস পরিত্যাগে সচেষ্ট হওয়া উচিত।

✓ অস্বাস্থ্যকর খাবার ও অলস জীবন যাপনের ফলে শরীরের ওজন বেড়ে যায়। আর শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া প্রস্টেটের জন্য অপকারিতা বয়ে আনে। তাই বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার, ফাস্টফুড ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার গুলো বর্জন করতে হবে।

✓ প্রস্রাবের বেগ চেপে রাখা আরেকটি বাজে অভ্যাস যা প্রস্রাবের ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে। আর প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়ার সাথে বীর্যের রঙ হলুদ হওয়ার যোগসূত্র রয়েছে তা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই প্রস্রাবের ইনফেকশন প্রতিরোধে প্রস্রাবের বেগ চেপে রাখা যাবে না এবং সেই সাথে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে (২ থেকে ৩ লিটার) পানি পান করতে হবে।

যৌনবাহিত রোগ এবং বীর্যের রং

যৌন বাহিত রোগ (STDs – sexually transmitted diseases) এর সাথে বীর্যের রং পরিবর্তনের বিষয়টি বোঝার সুবিধার্থে পুরুষের লিঙ্গ থেকে নিঃসৃত স্রাবের (Discharge) ধরণগুলো সম্পর্কে একটু কথা বলা যাক। পুরুষের লিঙ্গ থেকে প্রস্রাব বাদে দুই ধরনের স্রাব নিঃসৃত হতে পারে। যার মধ্যকার একধরনের স্রাব যৌনতার সাথে সম্পর্কিত যা আবার দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথাঃ

✓ যৌন মিলনের আগে উত্তেজিত হলে পানির মতো সামান্য তরল বের হয়। অজ্ঞতা বশত অনেকেই এটিকে অস্বাভাবিক মনে করে থাকেন কিন্তু এটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক যে উত্তেজিত হলে লিঙ্গ থেকে তরল বের হবে। এর জন্য দুশ্চিন্তা করার বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার কোনো দরকার নেই।

✓ যৌন মিলনের চরম পর্যায়ে বীর্য বের হয় যার মধ্যে শুক্রাণু থাকে। সাধারণত বীর্যের কোনো বাজে গন্ধ থাকে না। তবে গন্ধ থাকলে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে।

যৌনতার সাথে সম্পর্কিত নয় এমন স্রাব গুলোকে অস্বাভাবিক ভাবে ধরে নেওয়া হয়। যেমনঃ যৌন বাহিত রোগের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার উত্তেজনা বা যৌন মিলন ছাড়াই বীর্যের মতো ঘন তরল বের হয় যা সাধারণত হলুদ বা সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। বিশেষত গনোরিয়া, ক্ল্যামিডিয়া, হার্পেস (HSV- herpes simplex virus) ইত্যাদি যৌন রোগের সংক্রমণের ফলে মূত্রনালীতে প্রদাহ হয় এবং স্রাব দেখা যায়। এক্ষেত্রে স্রাবের সাথে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ, জ্বর ইত্যাদি হতে পারে। আবার এই সমস্ত যৌন বাহিত রোগের জটিলতা হিসেবে Leukocytospermia, প্রস্টেটে ইনফেকশন ইত্যাদি হতে পারে যা বীর্যের রঙ হলুদ হওয়ার জন্য দায়ী। যৌন বাহিত রোগের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

কখন ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন?

আপনি যদি কখনো লক্ষ্য করে দেখতে পান যে আপনার বীর্যের রঙ কিছুটা হলুদ বর্ণের তবে সাথে সাথেই আতংকিত হয়ে পড়বেন না। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিশেষ কোনো জটিল প্রকৃতির রোগ বা সমস্যা ছাড়াই এমনটি হতে পারে যা কয়েকদিন পর আপনাআপনি ঠিক হয়ে যাবে। কতদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা যুক্তিযুক্ত হবে এই প্রশ্নের উত্তরে হেলথ এক্সপার্টদের পরামর্শ হলো সর্বোচ্চ ১ থেকে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতে পারে। এর মধ্যে বীর্যের হলুদ ভাব দূর না হলে সেক্ষেত্রে একজন যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। তবে কারো ক্ষেত্রে যদি বীর্যের রঙ হলুদ হওয়ার পাশাপাশি আনুষাঙ্গিক লক্ষণাবলী (যেমনঃ জ্বর, বীর্যপাতের সময় ব্যথা, গন্ধ, প্রস্রাব অথবা বীর্যের সাথে রক্ত, যৌন মিলনে সমস্যা ইত্যাদি) দেখা যায় সেক্ষেত্রে অপেক্ষা না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

বীর্য হলুদ হলে কি চিকিৎসা নিতে হবে?

বীর্য হলুদ হওয়ার চিকিৎসা নির্ভর করে তার কারণের উপর ভিত্তি করে। যেমনঃ প্রস্টেট জনিত সমস্যা হলে প্রস্টেটের চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। আবার ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস জনিত সংক্রমণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী এন্টি বায়োটিক বা এন্টি ভাইরাল ওষুধ সেবন করতে হবে।

এছাড়াও কারো ক্ষেত্রে কম পানি পান করা, খাবার বা কোনো ওষুধ খাওয়ার ফলে বীর্যের রঙ হলুদ হলে সেক্ষেত্রে যথাযথ কারণ দূর করতে হবে। যেমনঃ বেশি বেশি পানি পান করা, সমস্যা সৃষ্টি করে এমন খাবার (রসুন, পিঁয়াজ, হলুদ, শতমূলী ইত্যাদি) কম খাওয়া এবং ওষুধের ক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসককে বিষয়টি অবগত করতে হবে।

বীর্য হলুদ হলে আতংকিত না হয়ে যথাযথ কারণ খুঁজে সহজ সমাধানের চেষ্টা করুন অথবা প্রয়োজন অনুসারে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। সেই সাথে যাদের ক্ষেত্রে বীর্যের রঙ হলুদ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে তারা মাঝে মধ্যে বীর্যের রঙ খেয়াল করুন।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *