গর্ভপাত (Miscarriage) বিষয়টি নিয়ে অনেকের মধ্যেই নানাবিধ ভুল ধারণা এবং কুসংস্কার রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে গর্ভপাত কেন হয়ে থাকে এবং গর্ভপাত হওয়ার পরবর্তী এবং প্রতিরোধে করণীয় বিষয়াবলী কি সেই সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি।
এই অনুচ্ছেদে গর্ভপাতের কারণ, লক্ষণ, ঝুঁকির কারণ (Risks factors), চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে অনুচ্ছেদের শেষের দিকে রয়েছে একবার গর্ভপাতের পর পুনরায় গর্ভধারণ করা যায় কিনা এবং করা গেলে সেক্ষেত্রে কি কি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত সেই বিষয়ক বিশেষ নির্দেশনা।
গর্ভপাত কি? (What is miscarriage?)
গর্ভকালীন সময়ের প্রথম ২০ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভস্থ ভ্রূণের মৃত্যু হলে তাকে মেডিকেলের ভাষায় গর্ভপাত (Miscarriage) বলা হয়। তবে শুধুমাত্র ১ শতাংশ ক্ষেত্রে ২০ সপ্তাহের পরে গর্ভপাত হতে পারে। সাধারণত গর্ভধারণের ১৬ সপ্তাহের মধ্যেই একটি ভ্রূণ প্রাণ লাভ করে থাকে এবং এই সময়ের পর থেকে একজন মা তার পেটের মধ্যে বাচ্চার নড়াচড়া করার অনুভুতি টের পেয়ে থাকেন।
হঠাৎ করে পেটের মধ্যে বাচ্চার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেলে শুরুতেই আতংকিত হওয়া যাবে না। কারণ সবসময় বাচ্চা নড়াচড়া করবে এমনটি নয় বরং মাঝে মধ্যে নড়াচড়া অনুভূত নাও হতে পারে। তবে নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়াও আরো কিছু লক্ষণ দেখা দিলে সেক্ষেত্রে গর্ভপাত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভপাতের ক্ষেত্রে কি কি লক্ষণ দেখা যায়।
গর্ভপাতের লক্ষণ (Symptoms of Miscarriage)
সবার ক্ষেত্রে গর্ভপাতের ফলে একই রকম লক্ষণ দেখা যায় না বরং ব্যক্তি বিশেষে আলাদা আলাদা প্রকৃতির লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। গর্ভকালীন সময়ের প্রথম মাসেই গর্ভপাত হলে সেক্ষেত্রে কেউ কেউ আবার বুঝতেই পারে না যে সে গর্ভধারণ করেছিলো এবং তার ক্ষেত্রে গর্ভপাত হয়েছে। কারণ গর্ভপাতের লক্ষণ আর মাসিকের (Menstruation) লক্ষণের মধ্যে অনেকটাই মিল রয়েছে। তবে গর্ভপাত ও মাসিকের ক্ষেত্রে কিছু পার্থক্য রয়েছে যা নিচের দিকের আলোচনা থেকে বুঝতে পারবেন। যাই হোক এই পর্যায়ে গর্ভপাতের লক্ষণ সমূহ নিচে তুলে ধরা হলো:
- রক্তপাত (Vaginal bleeding)
- রক্তের মধ্যে চাকা চাকা ভাব
- পেটে মোচড়ানো ব্যথা (Cramping pain)
- পিঠে ব্যথা (Back pain) ইত্যাদি
উপরোক্ত লক্ষণ সমূহ দেখা দিলে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ (Gynecologist) চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। চিকিৎসক তার পর্যবেক্ষণ (Physical examination) এবং আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করানোর মাধ্যমে নিশ্চিত করে বলতে পারেন যে গর্ভপাত হয়েছে কিনা। অনেকের ক্ষেত্রে প্রথম বার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হয় না এবং সেই ক্ষেত্রে এক সপ্তাহ পর পুনরায় আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানোর নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।
গর্ভপাতের কারণ (Causes of miscarriage)
গর্ভপাতের কারণ দুই রকমের হতে পারে। একটি হলো সংঘটিত গর্ভপাত যা নিজেদের প্রচেষ্টায় করানো হয়ে থাকে। অন্যটি হলো আপনাআপনি গর্ভপাত হওয়া যাকে সেচ্ছাকৃত গর্ভপাত বলা হয়।
সংঘটিত গর্ভপাত
আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত উল্লেখযোগ্য হারে সংঘটিত গর্ভপাত হয়ে চলেছে যার মধ্যকার সিংহ ভাগ হলো অবৈধ যাকে অনিরাপদ গর্ভপাত ও বলা হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংঘটিত গর্ভপাত কে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন: গর্ভবতী মায়ের প্রাণ নাশের হুমকি থাকলে সেক্ষেত্রে গর্ভপাত করানোর ব্যাপারে ধর্মীয় নীতি ও দেশের আইন অনুযায়ী বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে অর্থনৈতিক, সামাজিক অথবা পারিবারিক কোনো সমস্যার অজুহাতে গর্ভপাত করানোর ব্যাপারে ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। সংঘটিত গর্ভপাতের কারণ সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
১. অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ
অবাঞ্চিত গর্ভধারণ বলতে বোঝায় ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও গর্ভধারণ (Conceive) করে ফেলা যা সাধারণত জন্ম নিয়ন্ত্রণের সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অক্ষমতার ফলে হয়ে থাকে। স্বামী ও স্ত্রীর স্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি বাচ্চা নিতে না চাইলে সেক্ষেত্রে উপযুক্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত এবং কার্যকরী হলো মহিলাদের জন্য বড়ি (Oral Contraceptive Pill) খাওয়া এবং পুরুষের জন্য কনডম (Condom) ব্যবহার করা। এর বাইরে অন্যান্য আরো
অনেক পদ্ধতি রয়েছে যেগুলোর কার্যকরীতা সম্পর্কে জানতে এবং আপনার জন্য যথার্থ পদ্ধতি গ্রহণের জন্য একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
উল্লেখ্য অধিকাংশ মহিলাদের ক্ষেত্রেই একবার গর্ভধারণ করে বাচ্চা প্রসব করার পর কখন থেকে আবার জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে সেই বিষয়ে অজ্ঞতা রয়েছে। আর যার ফলে পুনরায় গর্ভধারণ করে থাকেন যা রক্ষা করা সম্ভব হয় না অর্থাৎ অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
একবার প্রসবের পর অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ এড়াতে কখন থেকে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করবেন সেই বিষয়ে জানতে এই অনুচ্ছেদটি পড়ুন।
২. পেশাগত সিদ্ধান্ত
নারী শিক্ষার অগ্রগতির ফলে বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে অধিকাংশ মেয়ে চাকরি করতে পছন্দ করেন। কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যেমন দেরিতে বাচ্চা নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে তেমনি ভাবে অনেকের ক্ষেত্রে অপরিকল্পিতভাবে গর্ভধারণ হয়ে গেলে তখন পেশাগত দিক বিবেচনায় গর্ভপাত করানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। তবে এটি একটি নারীর জন্য পরবর্তীতে গর্ভধারণ করার অক্ষমতা সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবার অনেকেই গর্ভপাতের বিষয়টি ভুলতে না পেরে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।
৩. স্বাস্থ্যের ঝুঁকি
গর্ভবতী মায়ের শরীরে যদি এমন কোনো রোগের সংক্রমণ হয় যেখানে গর্ভপাত করানো না হলে মায়ের স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা তৈরি হয় সেক্ষেত্রে গর্ভপাত করানো উচিত। কারণ এক্ষেত্রে মায়ের ক্ষতি হওয়া সহ গর্ভস্থ ভ্রূণ এমনিতেও নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং গর্ভপাত করানোর মাধ্যমে মায়ের জীবন বিপন্ন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারলে পরবর্তীতে আবার গর্ভধারণ করা সম্ভব হবে।
সাধারণত জরায়ুর রোগ (ইনফেকশন, ক্যান্সার), মারাত্বক প্রকৃতির উচ্চ রক্তচাপ, প্রিএক্লাম্পশিয়া (Preeclampsia), এক্লাম্পশিয়া (Eclampsia), Ectopic pregnancy, হার্টের রোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি ইত্যাদি। কোন রোগের ফলে কখন গর্ভপাত করানো উচিত সেই বিষয়ে অবশ্যই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের নির্দেশনা মেনে চলা উচিত।
৪. বিয়ের আগে গর্ভধারণ
বিবাহ বহির্ভূত গর্ভধারণ করা আমাদের দেশে সম্পূর্ণভাবে অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক ছেলে মেয়ে বিবাহের পূর্বে সম্পর্কে লিপ্ত হয় এবং তা একসময় শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার মাধ্যমে পেটে বাচ্চা হতে দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে কেউ কেউ আবার গোপনেই সমাধান করার নিমিত্তে ফার্মেসি থেকে গর্ভনাশক বড়ি কিনে খেয়ে থাকেন যা মারাত্বক ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন: অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, জরায়ুর প্রাচীরে ক্ষত সৃষ্টি, পুনরায় গর্ভধারণের সক্ষমতা নষ্ট হওয়া ইত্যাদি।
দুর্ঘটনা বশত বিবাহ বহির্ভূত গর্ভধারণ হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে পরিবারের মানুষদের জানাতে হবে। প্রয়োজনে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
৫. অত্যন্ত কম বয়স
১০ থেকে ১২ বছর বয়সের পর থেকেই একটি মেয়ের বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হয় অর্থাৎ ওভারি থেকে ডিম্ব নিঃসরণ হয় যা পুরুষের শুক্রাণুর সাথে মিলিত হয়ে ভ্রূণ গঠন করতে পারে। তবে এতো কম সময়ে গর্ভধারণ করার জন্য শরীর যথাযথ ভাবে পরিপক্ক হয়ে উঠে না। কিন্তু আমাদের দেশে বাল্যবিবাহের ফলে অনেক কম বয়সে গর্ভধারণের ঘটনা ঘটতে দেখা যায় যার ফলে অনেকেই গর্ভপাত করাতে চান। কিন্তু এটি অবৈধ এবং মেয়ের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।
আর তাই এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাল্য বিবাহ রোধ করতে হবে। আর যাদের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই কম বয়সে বিয়ে হয়েছে তাদের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত। সেই সাথে গর্ভধারণের জন্য কমপক্ষে ২০ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ গর্ভধারণের জন্য নূন্যতম ২০ বছর বয়স হলে তা নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হবে।
৬. পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং জীবনধারা
একজন গর্ভবতী মা হিসেবে আপনার পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং জীবন যাপন পদ্ধতির কিছু ভুল গর্ভপাতের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেমন: বাথরুমের পিচ্ছিল থাকার ফলে পা পিছলে পড়ে গিয়ে তলপেটে আঘাত এবং গর্ভপাত, ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস, অপুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন, কিছু কিছু ওষুধ সেবন ইত্যাদি।
স্বেচ্ছাকৃত গর্ভপাত
গর্ভকালীন সময়ে অনেক সময় অনিচ্ছাকৃত ভাবে গর্ভপাত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কিছু কিছু কারণ রয়েছে যা প্রতিরোধ করা যায় না তবে এই বিষয়ে জানা থাকলে আগে থেকেই সতর্ক হওয়া যায়।
১. জন্মগত বা বংশগত অস্বাভাবিকতা
অনেকের ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাসে গর্ভপাতের ঘটনা রয়েছে যার প্রভাব পরবর্তী বংশধরের উপর পড়তে পারে। অর্থাৎ পারিবারিক ভাবে গর্ভপাতের প্রবণতা থাকে তবে এটিকে কোনো কুসংস্কার ভেবে কবিরাজি চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজন নেই। বংশগত ভাবে যেমন অনেক রোগের আক্রমণ হতে দেখা যায় তেমনি ভাবে এটিও একটি বংশগত সমস্যা। তবে পারিবারিক ইতিহাসে গর্ভপাতের ঘটনা ঘটেছে বলেই সবার ক্ষেত্রে তা সংঘটিত হবে এমনটি নয় বরং বংশগত প্রভাবে গর্ভপাত খুব কম ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। সুতরাং এটি নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছুই নেই বরং গর্ভকালীন সময়ে যতটা সম্ভব নিজেকে চাপমুক্ত রাখতে হবে।
২. প্রতিরোধ সংক্রান্ত কারণসমূহ
গর্ভপাতের কিছু কিছু কারণ রয়েছে যা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিরোধক্ষম। যেমন: অতিরিক্ত ওজন, চা ও কফি পান করা, উচ্চ রক্তচাপ, যৌন রোগ (Sexually transmitted diseases), রুবেলা সংক্রমণ ইত্যাদি।
গর্ভধারণের আগে থেকে শুরু করে গর্ভকালীন সময়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। তবে গর্ভকালীন সময়ে কিছু কিছু উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করা ক্ষতিকর হতে পারে আর তাই সবচেয়ে নিরাপদ হলো প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা।
৩. হরমোনগত ব্যাধি
শরীরে হরমোনের স্বাভাবিক ভারসাম্য বজায় না থাকলে তার ফলে গর্ভপাত হতে পারে। বিশেষত হরমোন জনিত রোগ হিসেবে এক্ষেত্রে থাইরয়েডের সমস্যা এবং অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তবে এর বাইরেও শরীরে আরো অনেক হরমোন (Prolactin, Progesterone) রয়েছে যা গর্ভস্থ ভ্রূণের শরীরে যথাযথ পুষ্টি উপাদান পৌঁছাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এদের ভারসাম্যহীনতার ফলে গর্ভপাত হতে পারে।
থাইরয়েড হরমোন সহ শরীরের সব গুরুত্বপূর্ণ হরমোনের ভারসাম্য ঠিক আছে কিনা তা গর্ভধারণের পূর্বে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষা করা উচিত। বিশেষত থাইরয়েডের সমস্যা এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এনে গর্ভধারণ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
৪. জেনেটিক কারণ
জেনেটিক কারণ বা ক্রোমোজম জনিত ত্রুটির ফলে গর্ভপাত হতে পারে। যদিও জেনেটিক কারণে গর্ভপাত হওয়ার হার খুব বেশি নয় তবে এটিকে এড়ানো সম্ভব নয়। আশার কথা হলো এই যে জেনেটিক্স নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন যার মাধ্যমে এক সময়ে হয়তো জেনেটিক রোগ গুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
৫. জরায়ুর মুখে কার্যহীনতা
জরায়ুর মুখে (Cervix) মাংসপেশী রয়েছে যা এটিকে সংকোচন প্রসারণের ক্ষেত্রে সহায়তা করে। কোনো কারণ বশত জরায়ু মুখের পেশীর কার্যকরিতা কমে গেলে তখন নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জরায়ু মুখের অতিরিক্ত প্রসারণ ঘটে যা গর্ভপাতের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সাধারণত জরায়ু বা জরায়ু মুখের কোনো সার্জারির মাধ্যমে আঘাত প্রাপ্ত হলে সেক্ষেত্রে জরায়ু মুখের কার্যকরিতা কমে যায়।
অনেকের মধ্যেই ভুল ধারণা রয়েছে যে গর্ভকালীন সময়ে ব্যায়াম করা অথবা যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ফলে জরায়ু মুখের প্রসারণ তথা গর্ভপাত হতে পারে। কিন্তু এই ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবে গর্ভকালীন সময়ে খুব বেশি ভারী ব্যায়াম করা উচিত নয়। এবং সেই সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে পেটে যেন আঘাত না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
Ectopic pregnancy এবং গর্ভপাত
Ectopic প্রেগন্যান্সি একটি জটিলতর বিষয় যে সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকলে একজন গর্ভবতী মায়ের প্রাণ নাশের সম্ভাবনা হ্রাস করা যায়। সাধারণত ডিম্বাণু ও শুক্রাণু মিলে একটি ভ্রূণ গঠন হয় যা জরায়ুর মধ্যে অবস্থান করে। অনেকের ক্ষেত্রেই অস্বাভাবিক ভাবে এই ভ্রূণ ফ্যালোপিয়ান টিউবের (Fallopian tube) মধ্যে অবস্থান করে এবং বেড়ে উঠতে থাকে। কিন্তু ফ্যালোপিয়ান টিউব ভ্রূণ বেড়ে উঠার সাথে সাথে এতো বেশি সম্প্রসারণ হতে পারে না যার ফলে একসময় এটি ফেটে (Ruptured) গিয়ে রক্তক্ষরণ হয় এমনকি গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু হতে পারে।
এই পরিস্থিতি প্রতিরোধে করণীয় বিষয়াবলীর মধ্যে সর্বপ্রথম কাজ হলো গর্ভকালীন সময়ের প্রথম ২ মাসের মধ্যে একটি আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানো। যার মাধ্যমে বোঝা যাবে যে ভ্রূণ জরায়ুতে অবস্থান করেছে নাকি ফ্যালোপিয়ান টিউবে। যদি ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্যে অবস্থান করে থাকে তবে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গর্ভপাত করে মায়ের জীবন রক্ষা করা জরুরী।
টুইন বেবি সহ গর্ভপাত
একই সাথে দুইটি ডিম্বাণু নিষিক্ত হলে অথবা একটি ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার পর দুইটি ভ্রূণ গঠন করার মাধ্যমে জমজ বাচ্চা হয়ে থাকে। জমজ বাচ্চা হলে জরায়ুর মধ্যে গঠন ও বৃদ্ধিতে কিছুটা ত্রুটি হতে পারে। এছাড়াও জমজ বাচ্চার ক্ষেত্রে গর্ভপাত সহ আরো কিছু জটিলতা হওয়ার অনেক বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন: গর্ভকালীন সময় শেষ হওয়ার আগেই বাচ্চা প্রসব করা (Preterm birth), প্রিএক্লাম্পশিয়া ইত্যাদি।
জমজ বাচ্চার ক্ষেত্রে কদাচিৎ বিশেষ একধরনের গর্ভপাত হয়ে থাকে যাকে মেডিক্যালের ভাষায় vanishing twins বলা হয়। এক্ষেত্রে একটি ভ্রূণ প্লাসেন্টা (Placenta) এর মধ্যে ঢুকে পরে অর্থাৎ নষ্ট হয়ে যায় কিন্তু অপর ভ্রূণটি ভালো থাকে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে সুস্থ ভ্রূণটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে কম ওজন নিয়ে বাচ্চা জন্ম গ্রহণ করতে দেখা যায়। যারা গর্ভকালীন সময়ের শুরুর দিকে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করিয়ে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি শুরুতেই বোঝা সম্ভব হয়। অন্যথায় প্রসবের পর প্লাসেন্টার মধ্যে ভ্রূণের অংশবিশেষ দেখে চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন যে Vanishing twins হয়েছিলো।
গর্ভপাতের চিকিৎসা (Treatment of Miscarriage)
গর্ভপাতের চিকিৎসা হিসেবে রয়েছে D & C যা দ্বারা Dilation and Curettage কে বোঝানো হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে জরায়ুর মুখ একটি ছোট্ট যন্ত্র (Speculum) দ্বারা প্রসারিত করে অন্য আরেকটি যন্ত্র (Curette) দিয়ে জরায়ুর মধ্যে থাকা মৃত ভ্রূণ বা ভ্রূণের অংশবিশেষ বের করে আনা হয়।
D & C করতে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকার প্রয়োজন পড়ে না। মাত্র কয়েক মিনিটের এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর কয়েক ঘন্টা বিশ্রাম করে বাড়িতে যাওয়া যায়। D & C শেষে বাড়ীতে অবস্থান কালে সামান্য ব্যথা ও রক্ত ক্ষরণ হতে পারে। তবে রক্ত ক্ষরণ যদি পরিমাণে এতোই বেশি হয় যে প্রতি ঘন্টায় প্যাড (Sanitary napkin) পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় অথবা জ্বর দেখা দেয় সেক্ষেত্রে পুনরায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। উল্লেখ্য D & C একটি ছোট সার্জারি হলেও অবশ্যই তা একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অথবা দক্ষ প্রশিক্ষক দ্বারা সম্পন্ন করানো উচিত। অন্যথায় অদক্ষ হাতে এই সার্জারি সম্পন্ন করার ফলে কিছু জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন:
- জরায়ু ফুটো হয়ে যেতে পারে
- জরায়ু মুখ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে
- ইনফেকশন (Infection) ইত্যাদি
কিভাবে বুঝবেন গর্ভপাত নাকি মাসিক?
একজন নারীর প্রতি মাসে পিরিয়ড বা মাসিক হয়ে থাকে কিন্তু গর্ভধারণ (Conceive) করলে সেক্ষেত্রে মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। তবে গর্ভধারণ যদি অপরিকল্পিতভাবে হয়ে থাকে অর্থাৎ যেখানে আপনি জানেন না যে গর্ভধারণ করে ফেলেছেন এবং পরে ঠিকই আপনার মাসিক শুরু হয়েছে সেক্ষেত্রে অনেক সময় এমন হতে পারে যে ইতিমধ্যেই গর্ভধারণ হয়েছিলো এবং এখন যে রক্তপাত হচ্ছে সেটি মাসিকের নয় বরং গর্ভপাতের। ৩ টি বিষয়ের দিকে খেয়াল করলে আপনি বুঝতে পারবেন যে মাসিক নাকি গর্ভপাত?
- গর্ভপাতের ক্ষেত্রে পেটে ব্যথা তুলনামূলক বেশি থাকে এবং চাপ চাপ রক্ত যায়।
- যদি একবার মাসিক হওয়ার পরবর্তী ৮ সপ্তাহ পর রক্তপাত দেখা দেয় অর্থাৎ মাঝখানে একবার মাসিক না হয়ে পরবর্তী মাসে মাসিক হলে সন্দেহজনক মনে হতে পারে। যদিও অনেকের ক্ষেত্রেই আবার এমন অনিয়মিত মাসিক হতে দেখা যায় তবে আপনি যদি এই সময়ের মধ্যে Early pregnancy এর কিছু লক্ষণ দেখতে পান তবে গর্ভপাত ধরে নিতে পারেন।
- মাসিকের ক্ষেত্রে রক্তপাত, ব্যথা ও অন্যান্য লক্ষণ সময়ের সাথে সাথে কমতে থাকে কিন্তু গর্ভপাতের ক্ষেত্রে জটিলতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
প্রতি সপ্তাহে গর্ভপাতের হার
গবেষণায় দেখা গেছে যে গর্ভকালীন সময়ের প্রথম ১৩ সপ্তাহের মধ্যে ৮০ শতাংশ গর্ভপাত হয়ে থাকে। ভ্রূণ বিকাশের শুরুর দিকে তুলনামূলক দুর্বল প্রকৃতির থাকে অর্থাৎ আঘাত অথবা প্রভাবকের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তবে সময়ের সাথে সাথে ভ্রূণের বৃদ্ধি যেমন বাড়তে থাকে তেমনি ভাবে তা তত বেশি শক্তিশালী হতে থাকে। যার ফলে গর্ভকালীন সময়ের শুরুতে গর্ভপাতের যতটা সম্ভাবনা দেখা যায় পরবর্তীকালে ১৩ থেকে ২০ সপ্তাহে এই সম্ভাবনা উল্লেখ্য হারে কমে যায়। তবে সকল ক্ষেত্রেই বাহ্যিক প্রভাবক, গর্ভপাতের কারণ এবং ব্যক্তিভেদে এই সম্ভাবনা উঠানামা করে।
গর্ভপাতের ঝুঁকি
মহিলাদের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সাথে সাথে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। বিশেষত ৩৫ বছরের আগেই মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণ করা উচিত কারণ এই সময়ে গর্ভপাত এবং সেই সাথে গর্ভকালীন আরো অন্যান্য জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে ৩৫ বছরের কম বয়সী একজন মহিলার ক্ষেত্রে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা মাত্র ১৫ শতাংশ। পক্ষান্তরে ৩৫ বছরের পর থেকে গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। মায়ো ক্লিনিক (Mayo clinic) এর তথ্য অনুযায়ী ৩৫ বছর বয়সী একজন মহিলার ক্ষেত্রে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ২০ শতাংশ। বয়স বেড়ে ৪০ বছর হলে এই সম্ভাবনা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৪০ শতাংশে এবং ৪৫ বছরের জন্য তা সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশে গিয়ে পৌঁছায়। বয়স ছাড়াও আরো কিছু বিষয় রয়েছে যা গর্ভপাতের ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত। যেমন:
- শারীরিক আঘাত
- ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানের প্রভাব এবং রেডিয়েশন (Radiation)
- ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস
- অতিরিক্ত পরিমাণে চা ও কফি পান করা
- কম ওজন (Underweight) অথবা স্থূলতা (Obesity)
- অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ইত্যাদি
গর্ভপাত কত ধরনের হয়ে থাকে?
গর্ভপাতের পর্যায় (Stages) অনুযায়ী কয়েকটি প্রকারভেদ রয়েছে যা নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
- Complete miscarriage: সম্পূর্ণ ভ্রূণ জরায়ুর বাইরে বেরিয়ে যায়
- Incomplete miscarriage: ভ্রূণের কিছু অংশবিশেষ ছিঁড়ে বের হতে থাকে
- Missed miscarriage: গর্ভস্থ ভ্রূণ মারা যায় কিন্তু তার কোনো অংশ বাইরে বের হয় না এমনকি গর্ভবতী মা তেমন কোনো লক্ষণ বুঝতে পারে না
- Threatened miscarriage: পেটে ব্যাথা এবং রক্তপাত দেখা দেয় যা গর্ভপাতের সংকেত বহন করে
- Inevitable miscarriage: লক্ষণ এবং জরায়ুর অবস্থা বিবেচনায় নিশ্চিত হওয়া যায় যে গর্ভপাত হবেই
- Septic miscarriage: জরায়ুর মধ্যে ইনফেকশন
শুধুমাত্র Complete miscarriage ব্যতীত অন্যান্য সকল ধরনের ক্ষেত্রে মৃত ভ্রূণ জরায়ু থেকে অপসারণের জন্য স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। Complete Miscarriage এর ক্ষেত্রে ভ্রূণ অপসারণ করার প্রয়োজন না থাকলেও শরীরের সার্বিক অবস্থার উন্নতির জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
গর্ভপাত পরবর্তীকালীন সহযোগিতা
গর্ভপাতের ফলে একজন নারী শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে আর তাই এই সময়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উচিত তাকে সাপোর্ট দেওয়া। শারীরিক ভাবে সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করতে সহযোগিতা করা এবং সেই সাথে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে। মানসিক দুঃখ কষ্ট ভুলে থাকার জন্য সবাইকে আন্তরিক ভাবে মিলে মিশে থাকতে হবে।
একবার গর্ভপাত হলেই আর বাচ্চার মা হওয়া সম্ভব নয় এমনটি ভেবে হীনমন্যতায় ভোগার কিছু নেই। বরং শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ হয়ে পুনরায় গর্ভধারণ করা যেতে পারে। Cleveland Clinic এর তথ্য অনুযায়ী গর্ভপাত হয়েছে এমন মহিলাদের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে সফলভাবে গর্ভধারণ করে মা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে প্রায় ৮৭ শতাংশ। শুধুমাত্র ১ শতাংশ ক্ষেত্রে পুনঃ পুনঃ গর্ভপাতের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়।
গর্ভপাতের পর আবারও গর্ভধারণ করা
একবার গর্ভপাত হলে পুনরায় গর্ভধারণের জন্য কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো প্রয়োজন। যেমন:
✓ রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে ডায়াবেটিস, থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ, প্রস্রাবে ইনফেকশন ইত্যাদি দেখে নিতে হবে।
✓ VDRL (Veneral disease research laboratory) এবং NAAT (Nucleic Acid Amplification Test) পরীক্ষার মাধ্যমে স্বামী ও স্ত্রী দুজনের শরীরে কোন যৌন রোগ রয়েছে কিনা তা নির্ণয় করতে হবে।
✓ প্রেশার মেপে দেখতে হবে যে উচ্চ রক্তচাপ হয়েছে কিনা।
যদি উপরোক্ত কোনো রোগ থাকে তবে সেক্ষেত্রে আগে চিকিৎসা গ্রহনের মাধ্যমে সুস্থ হতে হবে। অতঃপর গর্ভধারণের জন্য চেষ্টা করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে গর্ভধারণের প্রস্তুতি হিসেবে করণীয় কিছু বিষয়াবলী হলো:
- ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে হবে। যেমন: ব্রকলি, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, কলা, টমেটো, বাঙ্গি, মাশরুম ইত্যাদি। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফলিক এসিড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে
- ক্যালসিয়াম, আয়রন, Choline, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম ও অন্যান্য প্রিনেটাল ভিটামিন এ, ডি, সি, ই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে
- চিকিৎসক যদি যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে কোনো প্রকার নির্দেশনা অথবা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন তবে তা মেনে চলতে হবে
গর্ভপাত কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
গর্ভপাতের কিছু কিছু কারণ রয়েছে (যেমন: জেনেটিক্স বা ক্রোমোজম জনিত ত্রুটি, বংশগত রোগের ইতিহাস যেমন ডায়াবেটিস) যা প্রতিরোধ করা যায় না। তবে এর বাইরে আরো কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো প্রতিরোধক্ষম আর এই ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS of UK) এর নির্দেশনা সমূহ নিচে তুলে ধরা হলো।
- স্বামী স্ত্রী দুজনের জন্যই ধূমপান সম্পূর্ণভাবে বর্জন করতে হবে
- মদ্যপান বা অন্য কোনো নেশা দ্রব্য গ্রহণ করা যাবে না
- খাবারের মধ্যে ফলমূল ও শাকসবজি বেশি পরিমাণে রাখতে হবে
- দৈনিক ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করা যাবে না
- শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে হবে
- রুবেলার (rubella) টিকা গ্রহণ করতে হবে
- জরায়ু মুখের সমস্যা সমাধানে সার্জারির (Put a small stitch of strong thread) সহায়তা নিতে হবে
করোনা এবং গর্ভপাত
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে যেমন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সহ প্রাণনাশের সম্ভাবনা রয়েছে তেমনি ভাবে তা গর্ভবতী মায়েদের জন্য নানাবিধ জটিলতার সৃষ্টি করে থাকে। সৃষ্ট জটিলতার মধ্যে অন্যতম একটি হলো প্লাসেন্টার মাধ্যমে গর্ভস্থ ভ্রূণের শরীরে যথাযথভাবে পুষ্টি উপাদান পৌঁছাতে বিঘ্ন ঘটা যার ফলে গর্ভপাত সংঘটিত হয়ে থাকে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের দরুন সৃষ্ট গর্ভপাত প্রতিরোধে গর্ভধারণের পূর্বে করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ করা উচিত। সেই সাথে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে যেনো করোনার সংক্রমণ না হয়।
গর্ভপাত একটি জটিলতর সমস্যা তবে এর জন্য রয়েছে চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা। আর তাই আতংকিত না হয়ে যে কোনো সমস্যায় একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
Leave a Reply