যেকোনো সংস্করণে বিশ্বের অন্যতম সেরা দল ভারত।
টি–টোয়েন্টিতে ভারতকে সর্বোচ্চ সমীহের চোখেই দেখা হয়।
আইপিএলের দেশ—যে ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রতিযোগিতা ২০ ওভারের ক্রিকেটকে অন্যমাত্রা দিয়েছে।
যে লিগে খেলার জন্য মুখিয়ে থাকেন বিশ্বের বড় তারকারা।
যে লিগে টাকা ওড়ে; সবচেয়ে বড় কথা যে লিগের কারণেই ভারত পাচ্ছে টি–টোয়েন্টির সব সেরা ক্রিকেটারদের।
সেই ভারতই যখন টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের গ্রুপে টানা দুই ম্যাচ হেরে যায়, সেটি অবাক করবেই।
একটা দল হারতেই পারে, সেরা দলও টানা দুটি ম্যাচে হারতে পারে।
কিন্তু ভারত ক্রিকেটপ্রেমীদের অবাক করেছে হারের ধরনে।
প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০ উইকেটের হার, কাল দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটের হার।
এ দুটি হারে ২০০৭ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত সেমিফাইনালের আগেই বিদায় নেওয়ার শঙ্কায় পড়েছে।
ব্যাপারটা এমন যে তাদের সেমিফাইনাল খেলা নির্ভর করছে পুরোপুরি গ্রুপের অন্য দলগুলোর ওপর।
ক্রিকেটের কোনো বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় ভারত শেষ কবে এমন অবস্থায় পড়েছিল?
ভারতের এই ব্যর্থতা নিয়ে চলছে নানামুখী কাটাছেঁড়া।
সাবেক ক্রিকেটাররা নানা বিশ্লেষণ করছেন, কোহলি–রোহিত–লোকেশ রাহুল–যশপ্রীত বুমরাদের পারফরম্যান্স নিয়ে চলছে এন্তার গবেষণা।
তবে কাল নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে বাজে পারফরম্যান্সের মধ্যেও বল হাতে ভালো করা পেসার যশপ্রীত বুমরাহ জানালেন, হারের পেছনে মানসিক ক্লান্তি বড় কারণ।
ভারতীয় ক্রিকেটারদের মানসিক ক্লান্তির অনেক কারণ আছে।
গত মে মাস থেকে দলটা দেশের বাইরে।
কোভিড–সংক্রান্ত বিধির কারণে দিনের পর দিন তাদের কাটাতে হয়েছে জৈব সুরক্ষাবলয় নামের ‘কারাগার’–এর মধ্যে, যেখানে কোনো সামাজিক জীবন নেই।
প্রথমে ইংল্যান্ডে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দীর্ঘ টেস্ট সিরিজ।
মাঝে একটা দল তৈরি করে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হলো সিরিজ খেলতে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলতে থাকা দলের খেলোয়াড়েরা চলে এলেন আরব আমিরাতে—আইপিএলে খেলতে, সেখানেও জৈব সুরক্ষাবলয়।
এরপর টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ক্রিকেটাররাও তো মানুষ—বুমরাহ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাজে পারফরম্যান্সর কারণ বলছেন এটিকেই।
ক্রিকেট দিন শেষে একটা খেলাই।
এ জন্য যদি ক্রিকেটারদের স্বাভাবিক জীবন পরিত্যাগ করতে হয়, তার একটা প্রভাব তো থাকবেই।
বুমরাহ অবশ্য সরাসরি জৈব সুরক্ষাবলয় কিংবা ক্রিকেটসূচির দোষ দেননি।
তবে মানসিক ক্লান্তির ব্যাপারটি তিনি লুকোননি, ‘মাঝেমধ্যে বিশ্রামের প্রয়োজন হয়।
টানা ছয় মাস ধরে খেলার মধ্যে থাকা সহজ নয়।
আমরা ছয় মাস ধরে পথে পথে ঘুরছি।
বিসিসিআই অবশ্য চেষ্টা করেছে আমাদের সর্বোচ্চ মানসিক স্বস্তি দিতে।
কিন্তু মনের মধ্যে তো ক্লান্তি থাকেই।
সূচি আমাদের হাতে নেই। এভাবে জৈব সুরক্ষাবলয়ের মধ্যে থাকলে মানসিক ক্লান্তি আসেই। কিছু করার নেই।’
বুমরাহর এ মন্তব্য অনেক কিছুকেই সামনে নিয়ে এসেছে।
দীর্ঘ সূচি শেষ না হতে হতেই আইপিএল; সেটি শেষ না হতে হতে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
ক্রিকেটারদের যদি ‘যন্ত্র’ মনে করা শুরু হয়, তাহলে যা হবে, সেটিই হয়েছে ভারতের বেলায়।